তাহিরপুরে জলাবদ্ধতায় জমিতে বোরো রোপণ করতে পারছেন না কৃষক, ১৫ হাজার একর জমি অনাবাদী থাকার আশংকা

20

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
আজগুয়া ফাল্গুন মাসের ৩ তারিখ এখনো জমিন পানির নীচে মনে অয়না এই বার সব জমিন রোয়াইতা পারমু। শনির হাওরের কৃষক নুর আলী মিয়া বৃহস্পতিবার হাওর থেকে ফিরতে-ফিরতে কথা গুলো বলছিলেন একই হাওরের অপর এক কৃষক নাজিম উদ্দিনের সাথে। কৃষক নাজিম উদ্দিনেরও একই আক্ষেপ এই বার এখনো জমি থেকে পানি না সরায় তিনিও কিছু জমিতে বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন না। আরও দু’একদিন রোপণ করা গেলেও পরবর্তীতে বোরো ধান রোপণ করেও আর কোন লাভ হবে না।
শুধু শনি হাওর নয় মাটিয়ান, মহালিয়া, জিনারিয়া, বাদে কানামুইয়া, বলদা, পানা, উলান, কলমা, নোয়াল, গলগলিয়া, সমসা-চুনখলা হাওর সহ কমপক্ষে ১২টি বোরো ফসলি হাওরে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছর অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে।
বছরে-বছরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বালি ও পলিমাটি পড়ে সব‘কটি নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পাশাপাশি হাওরের পানি নিষ্কাশনের খাল ও নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে হাওরে হাওরে।
তাছাড়া অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট নির্মাণও হাওরের জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় কৃষক।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, স্থায়ী জলাবদ্ধতায় চলতি বছর ৮ হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে যেতে পারে। তবে হাওরপারের কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত লোকজন ধারণা চলতি বছর অনাবাদি জমির পরিমাণ হবে ১৫ থেকে ১৬ হাজার একর। সমস্যা সমাধানের জন্য তারা নদী খনন, হাওর থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা ও খাল খনন সেই সাথে পরিকল্পিত স্লুইচ গেইট নির্মাণের দাবী জানান।
মারালা গ্রামের কৃষক নুর মিয়া বলেন, শনির হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য হাওরটির পশ্চিম দিকে ১৯৯৫ সালে একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু হাওরটির আহাম্মকখালী বাঁধের সম্মুখে বৌলাই নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় স্লুইস গেইটটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় গত কয়েক বছর ধরে তাদের গ্রামের অনেক কৃষক তাদের জমিতে আবাদ করতে পারেছেন না।
একই অবস্থার কথা জানালেন শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দূর্লভপুর গ্রামের কৃষক শফিক মিয়া তিনি ও জলাবদ্ধতার কারণে গুরমা হাওরে গত দুবছর ধরে তার ৪ কেয়ার জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না।
শনি হাওর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে অনেক হাওরে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। চলতি বছর অন্যান্য বছরেরর তোলনায় জলাবদ্ধতার পরিমান বেশী।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুছ সালাম বলেন, উপজেলার অনেকগুলো হাওরে প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।