প্রত্যাবাসনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন

9

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমার প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজ করছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মিয়ানমারের ওপর জোরালো কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না।
রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ প্রকাশ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। ভারত, চীন, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলোরও সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে কয়েক দফা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে ২০১৭ সালে নতুন করে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং মূলত কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এর ফলে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। কঠিন প্রহরা সত্ত্বেও তাদের ক্যাম্পে রাখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের নিজেদের মধ্যেও হানাহানি, খুনাখুনির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝেমধ্যেই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে। কোনোটাই বাংলাদেশের জন্য ভালো সংবাদ নয়। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনই হচ্ছে একমাত্র সমাধান।
বিশ্বব্যাপী সংকট বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলছে, অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। রোহিঙ্গারা যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য কী কী নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি হতে পারে, তার স্বরূপ ও বিস্তৃতি কেমন হবে এবং তার পেছনে দেশি-বিদেশি কোনো পক্ষ ও শক্তির কোনো হাত থাকতে পারে কি না ইত্যাদি বিষয় এখন বিশদভাবে বিবেচনা করতে হবে। বিবেচনা করতে হবে, গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কেন যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করা গেল না। মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে ঘিরে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং অন্যান্য কট্টরবাদী গোষ্ঠীর কোনো বৃহৎ স্বার্থ রয়েছে কি না এ প্রশ্নটাও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বিষফোড়া হয়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায়- বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার বৃদ্ধির জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, জীবিকা ও চলাফেরার সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তুলছে। আবার এ দেশে রোহিঙ্গা শিবিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই। কক্সবাজার বাংলাদেশের অত্যন্ত সংবেদনশীল ভূখণ্ড। এই এলাকায় রোহিঙ্গাসহ অন্য সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং স্থানীয় জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জরুরি।