হাওরাঞ্চল রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে

6

হাওরাঞ্চলকে দেশের শস্যভাণ্ডার বিবেচনা করা হয়। বোরো ধানের প্রায় এক-চতুর্থাংশই উৎপন্ন হয় এই হাওরাঞ্চলে। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে দেশের মিঠা পানির প্রাকৃতিক মাছের জোগানেরও একটি বড় অংশ আসে এই হাওরগুলো থেকে। কিন্তু দিন দিন কমছে হাওর, নদী, জলাশয়ের মাছ।
মহাশোল, তিলা শোল, ঢেলার মতো পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাছ হাওরে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। বিপন্নের তালিকায় আছে আরো বেশ কিছু প্রজাতির মাছ। এর জন্য দায়ী মনুষ্যসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক নানা কারণ। মৎস্যবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এখানকার মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে হাওর ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়বে।
সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অনেক হাওর। আদিকাল থেকেই এগুলো মিঠা পানির মাছের প্রধান প্রাকৃতিক উৎস। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাওরে মানুষের হস্তক্ষেপও বাড়ছে। সমগ্র হাওরাঞ্চল চাষাবাদের আওতায় চলে এসেছে। ধান চাষে ব্যাপক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো মাছের প্রজনন ব্যাহত করছে। মাছ মারাও যায়। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে ক্রমেই বেশি করে পলি আসছে। পলি জমে হাওরের নদী-জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে সেগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এ সময় অতিরিক্ত আহরণের কারণে মাছের পরিমাণ অনেক কমে যায়। পরবর্তীকালে মাছের প্রজননও কম হয়। সম্প্রতি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে এমন বহু তথ্য। ‘টেকনিকস অ্যাডাপশন অ্যান্ড ফর্মুলেশন অব গাইডলাইনস ফর সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট অব হাওর অ্যান্ড বিল ফিশারিজ’ শিরোনামে এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু। তিনি জানান, বিভিন্নভাবে হাওরের পানি দূষিত হচ্ছে। পলি জমে হাওর ভরাট হচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে পুরো ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁর মতে, হাওরে ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির মাছ চরমভাবে বিপন্ন। অনেক প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে।
দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার ৬৩ শতাংশ আসে মাছ থেকে। দরিদ্র মানুষ মাছের চাহিদা মেটায় মূলত উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে। শুধু হাওর নয়, সারা দেশেই উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ দ্রুত কমে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নদী-জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, নানা ধরনের দূষণ, অতিরিক্ত আহরণ, মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পিত পদক্ষেপের অভাব ইত্যাদি। অনেক মাছ প্রজননের জন্য নদী ও প্লাবনভূমিতে চলাচল করে। বাঁধ, রাস্তা কিংবা স্লুইস গেটের কারণে সেই চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারকে হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ের মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।