দক্ষতার সাথে বাজেট বাস্তবায়ন

42

জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্বাচনের বছরে বাজেটে নতুন কর আরোপের মতো অজনপ্রিয় পথে হাঁটেননি তিনি। বিপরীতে জনপ্রিয় কয়েকটি খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছেন। সার্বিকভাবে সব মহলকে সন্তুষ্ট রাখার প্রয়াস চালিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট তিনি প্রস্তাব করেছেন, তা গত অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। নতুন করে ১১ লাখ গরিব মানুষকে যোগ করে প্রায় এক কোটি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ভাতার ঘোষণা রয়েছে; অসচ্ছল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চাল আমদানি নিরুৎসাহ করতে আমদানি শুল্ক আবার আগের মতো ২৮ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষামূলক হলেও সরকারি-বেসরকারি চাকুরেদের পেনশন দেওয়ার একটি পরিকল্পনাও বাজেটে রয়েছে। শহুরে মধ্যবিত্তের ওপরও নতুন করে কোনো কর বসাননি অর্থমন্ত্রী। করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই রেখেছেন। করপোরেট করে ছাড় দিয়েছেন। এবারের বাজেটে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯৫৬ ডলারে নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করা হয়েছে। নারী উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে। ভর্তুকি বেড়েছে কৃষিতে। বলা হয়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা। মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৩২ হাজার কোটি টাকা।
প্রতিবছর বাজেট প্রস্তাবের পর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া যেমন হয়ে থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেটকে ‘গণমুখী’ ও ‘উন্নয়নমূলক’ বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘নির্বাচনী বাজেট’ আখ্যায়িত করে বিএনপি বলেছে, এই বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা সরকারের নেই। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এই বাজেটকে অবাস্তব বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সিপিবি বলেছে, ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল এই বাজেট গরিব ও মধ্যবিত্তকে আরো দরিদ্র করে দেবে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে নতুনত্ব তেমন কিছু দেখছেন না অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলেছেন, বিগত বাজেটগুলোর ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোকে ভালো দিক হিসেবেই বিবেচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। করপোরেট ট্যাক্স কমানোর ঘোষণাকেও এই বাজেটের ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের বৃহৎ আকার ও উন্নয়ন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর নেতারা। বাজেট বাস্তবায়নকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ মনে করছে, বাজেটে পোশাক খাতে করপোরেট ট্যাক্স বৃদ্ধি নতুন বিনিয়োগ ও রপ্তানি খাত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতি অর্থবছরের শেষে দেখা যায় অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয় না। কাজেই বাজেট প্রস্তাব বা পাস নয়, দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে।