পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা

4

দেশের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সঙ্গত কারণেই ছুটিছাটায় প্রচন্ড ভিড় হয়। অথচ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু তদারকির কোন দৃষ্টান্ত এত বছরেও গড়ে উঠতে দেখা গেল না। ফলে, বিভিন্ন সময়েই পর্যটকরা বিবিধ অব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। কখনও কখনও ধর্ষণসহ বড় ধরনের অপরাধও সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনটি কেন হবে? পর্যটনপ্রিয় মানুষরাই যদি নিরাপদে অবকাশ যাপন করতে না পারেন, তাহলে বিদেশী পর্যটকরা কিভাবে আকৃষ্ট হবেন?
ঈদের দুদিন পরে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সিলেটের জাফলংয়ে টিকেট কেনাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের সঙ্গে কাউন্টারের লোকদের বাক বিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এক তরুণী ও কোলে শিশু নিয়ে এক নারী এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা চালায় স্বেচ্ছাসেবকরা। ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে স্বেচ্ছাসেবকের জ্যাকেট পরিহিত কয়েক তরুণ ওই নারী ও মেয়েকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দূরে থাক, সাধারণ মানুষকেও ভয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। অনভিপ্রেত এ ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রাতে স্বামী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে সৈকত শহর কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক নারী। অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন নেতারা তখন বলেছিলেন, হোটেলে রাত যাপনে অত্যধিক ভাড়া এবং খাবারের উচ্চমূল্যের কারণে কক্সবাজার নিয়ে সমালোচনা সব সময়ই ছিল এবং আছে। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা দেশের পুরো পর্যটন খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কক্সবাজারে অপরাধী ও ধর্ষকদের বাধাহীন বিচরণ মূলত পর্যটন শিল্পের জন্যই অশনিসঙ্কেত। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এক অস্ট্রেলীয় নারী পর্যটককে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল, যা দেশ-বিদেশে খবর হয়। শারীরিক হেনস্তার পাশাপাশি ঘটছে ধর্ষণের মতো ঘটনাও। দেশের পর্যটন খাতকে গতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সে কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়াও গত বছর আগস্ট মাসে হবিগঞ্জের লাখাইয়ে টিক্কার হাওড়ে স্বামীর সঙ্গে নৌকায় করে ঘুরতে যাওয়া এক নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তরা ওই নারীর স্বামী ও তার এক বন্ধুকে বেঁধে রেখে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদাও দাবি করা হয়।
দেশে এমনিতেই মানুষের আনন্দ উদ্যাপনের জায়গা সীমিত। এর ওপর বর্তমানে বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রেই চলছে এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ও দুর্বৃত্তদের দাপট। তাদের শিকার হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ পর্যটকসহ শিশু ও নারীরাই। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানো অত্যাবশ্যক। পর্যটকদের ন্যায়সঙ্গত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরী।