আস্থা অর্জন করেছে পুলিশ – প্রধানমন্ত্রী

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পুলিশ এখন মানুষের ‘আস্থা ও বিশ্বাস’ অর্জন করেছে মন্তব্য করে এ বাহিনীর সদস্যদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার চায় পুলিশ বাহিনী তাদের মানবিক কাজের মাধ্যমে জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন করবে। বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের সেবক হবে এবং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে। মানুষ পুলিশের কাছে গেলে যে ন্যায়বিচার পাবে সেই আত্মবিশ্বাসটা যেন মানুষের মধ্যে থাকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্কের উদ্বোধন এবং গৃহহীনদের জন্য পুলিশের নির্মিত ৪০০টি বানানো ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশে থাকবেন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ- সুবিধা করা এবং বিশেষায়িত বাহিনী গড়ে তোলা, মানুষের সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই সেইভাবে সততার সঙ্গে আপনারা কাজ করে যাবেন, সেটাই আমরা চাই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বক্তৃতা করেন। অতিরিক্ত আইজিপি ড. নুরুর রহমান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি মানবিক উদ্যোগ- ‘সার্ভিস ডেস্ক’ এবং ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের ওপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম, পীরগঞ্জ, রংপুর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভার্চুয়ালি পুলিশ সদস্য এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, রাজারবাগ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এর সঙ্গে সকল থানা, পুলিশ রেঞ্জ এবং পুলিশ লাইন সংযুক্ত ছিল।
ধর্ষণ, নির্যাতন অথবা অন্য যে কোন অপরাধের শিকার নারীরা থানায় গিয়ে নিঃসংকোচে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এ জন্য দেশের প্রতিটি থানায় বসানো হয়েছে এই সার্ভিস ডেস্ক। যেখানে ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব সার্ভিস ডেস্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে জেলা, রেঞ্জ ও পুলিশ সদরদফতর কঠোরভাবে মনিটরিং করবে।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালে এ সার্ভিস ডেস্ক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এখন পর্যন্ত এখান থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৪৭৬ নারী, ৩২ হাজার ২৮৬ শিশু, এক লাখ ৩৮ হাজার ৩২৫ পুরুষ ও ১১ হাজার ৮১ প্রতিবন্ধীসহ মোট তিন লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক উক্তি- ‘এই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে হবে’ উল্লেখ করে বলেন, এই হেল্প ডেস্ক নির্মাণের মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধীদের সেবা দেয়া এবং গৃহহীনদের গৃহ দেয়া, এটা জনগণের পুলিশের কাজ। কাজেই আজকের পুলিশ জনগণের পুলিশ হিসেবেই আপনারা আজ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন।
তিনি বলেন, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমেই মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসা অর্জন করা যায় এবং এর মধ্যেই কর্মের সাফল্য নিহিত রয়েছে। আমাদের পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর, যারা একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকে তাদের জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে। যারা নিজেদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করে এবং শত নির্যাতনের মধ্যেও কোন প্রতিকার চাইতে পারে না, সেই মানুষগুলোর মধ্যে একটা আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তাদেরও যে নাগরিক অধিকার রয়েছে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পরই থানাগুলো দুস্থ ও নির্যাতিতদের আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য তাঁর সরকারের লিগ্যাল এইড সেল গঠন এবং এজন্য আলাদা ফান্ড প্রদানের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর উন্নয়নটা একদম তৃণমূল থেকেই শুরু করেছে। সর্বস্তরের লোকেরা যেন উন্নয়নের ছোঁয়াটা পায় সেই লক্ষ্য রেখেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করায় নারীদের জন্য অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। হেল্প ডেস্কে যারা কাজ করবেন তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব সময় প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রয়োজনে বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেব।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশে থাকবেন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ-সুবিধা করা এবং বিশেষায়িত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপ্রশিক্ষিত একটা বাহিনী, যে বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে, মানুষের কল্যাণ করবে, মানুষের কাজ করবে, আমরা সেটাই চাই, সেভাবে আমরা একে গড়ে তুলতে চাই। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সবাইকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে মোবারকবাদ জানিয়ে বাংলা নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছাও জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এলে জনগণের কল্যাণে কাজ শুরু করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন ও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রথমবার সরকারে এসে বলেছিলাম, কোন কুঁড়েঘর থাকবে না, আমরা একটা টিনের ঘর হলেও দেব। দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সেমিপাকা ঘর দিচ্ছি এবং উন্নতমানের জীবনযাপন যেন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যার শুভ ফল সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। উন্নয়নটা গতিশীল হবে। মানুষের যখন থাকার জায়গা হয়, তখন সেটাই তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এতে মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়। সেটা তাকে সুযোগ করে দেয় নিজের পায়ে দাঁড়াবার, আত্মকর্মসংস্থান করার।