রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বছরে ৩৫ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে বাড়ছে অর্থাৎ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রবিবার (১০ এপ্রিল) বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলবো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলবো- তারা যাতে সবাইকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করে। সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, প্রতি বছর তাদের সংখ্যা ৩৫ হাজার করে বেড়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। পাঁচ বছর হয়েছে, এতে দেড় লাখ কিন্তু অটোমেটিক বেড়ে গেছে। সেখানেও আমাদের একটি আশঙ্কার জায়গা। সেটা যাতে আমরা ট্যাকেল দিতে পারি, সেজন্য এসব ব্যবস্থার কথা আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।
প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অভিযানে অংশ নেবে
রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) ডাটাবেজ ব্যবহার করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরও জোরদার করা হবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। যদি কোনো অভিযান প্রয়োজন হয় সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে।
‘উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেষ্টনী তৈরি করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি হয়েছে, রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষ দিকে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন থাকবে আর রাস্তায় টহল দেবে, কোনো রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে। এটা আমরা জোরদার করছি।
মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বয়সভিত্তিক রেশন না দিয়ে ব্যক্তি হিসেবে দেওয়া হয়। একদিনের শিশুকে যে রেশন দেওয়া হয়, একজন প্রাপ্ত বয়স্ককেও সেই রেশন দেওয়া হচ্ছে। আমরা বলেছি, এটা বয়সভিত্তিক যেন দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এবং আশপাশে যাতে মাদক ব্যবসা করতে না পারে এজন্য জোরদার ব্যবস্থা করছি। নাফ নদীতে মাদক চোরাচালান রুখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা এ জায়গায় কঠোর হতে যাচ্ছি। কোনোক্রমেই আমাদের সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যাতে মাদক ব্যবসা না করতে পারে, সেজন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।’
‘আমরা যেটা অনুমান করছি, এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) মাদক স্টোর করা আছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।’
রোহিঙ্গারা আসার পর হাতের ছাপ নেওয়া হয়েছে, তারপরও তারা কীভাবে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যাদের চোখের ছাপ ও আঙুলের ছাপ আমরা নিয়েছি তারা কোনোক্রমেই পাসপোর্ট পাচ্ছে না। আগেও কিছু রোহিঙ্গা এখানে অবস্থান করতো। কিছু পালিয়েও এসেছে। ইউএনএইচএসসিআরের কাছে ডাটা আছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা এটা বন্ধ করবো।
‘ক্যাম্পের বাইরে যাতে আসতে না পারে, এজন্যই বেষ্টনী দিচ্ছি। কতজন বের হয়ে গেছে সেই তথ্য ইউএনএইচসিআর দিতে পারবে। তাদের কাছে আপডেট ডাটা আছে। আমরা তাদের রিকোয়েস্ট করবো। বেষ্টনী আর ২০ ভাগ যেটা বাকি আছে, সেটা শেষ হলে আরও কঠোর হবো। অনুমতি ছাড়া কাউকেই আমরা বের হতে দেবো না।
ছিনতাই বাড়েনি বরং কমেছে, দাবি মন্ত্রীর
ইদানীং ছিনতাই বেড়ে গেছে, এটা বাড়ার কারণ কী- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য ছিনতাই আগের তুলনায় কমেছে। ১০ বছর আগের কথা চিন্তা করে তুলনা করলে, এটা (ছিনতাই) এখন জিরো। কিন্তু মাঝে মাঝে কয়েকটি ঘটনার কারণে আপনারা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। আমার জানামতে, সবগুলোই ধরা পড়েছে। আমাদের পুলিশ অনেক অ্যাকটিভ। যারা ছিনতাই করুক পার পাবে না।’
তিনি বলেন, আজ দু’বছর, কোভিডে সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল। যখনই অর্থনৈতিক একটি চাপ পড়ে, তখনই এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটে। যেটা হচ্ছে খুব সামান্য, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।