টাঙ্গুয়া হাওরের নজর খালি বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে ৩ হাজার একর জমির বোরো ফসল

11

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
টাঙ্গুয়া হাওরের নজরখালি বাঁধ ভেঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে হাওরে রোপণকৃত ৩ হাজার একর জমির বোরো ফসল। গত ৭ দিন ধরে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করেও বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। শনিবার সকালে কৃষকের চোখের সামনেও ভেসে গেলে তাদের সোনারী ফসল। হাওরপারের কৃষকরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বাঁধটির দায়িত্ব নিলে আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে তাদের ফসল ডুবে যেত না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের দাবির মুখে দু এক বছর পর পর যথসামান্য বরাদ্দ দেন বাঁধ দেয়ার জন্য। যা একেবারেই অপ্রতুল। তাই অধিকাংশ বছরগুলোতে কৃষক নিজেরা সে¦চ্ছাশ্রমে বাধে কাজ করেন ফসল রক্ষা করার জন্য।
জানা যায়, মাদার ফিসারিজ খ্যাত রামসার সাইট টাঙ্গুয়া হাওর মূলত জলাশয় প্রধান হাওর। হাওরের জলাশয় রয়েছে ২৪ হাজার ৭শ একরের বেশী। পাশাপাশি হাওরের চতুরপাশে উঁচু স্থান বা কান্দা রয়েছে ৩ হাজার একরের মত। এক সময় ঐ উঁচু স্থান বা কান্দাগুলো পতিত জমি হিসেবে ছিলো। কোন কিছু চাষাবাদ হতো না। বেশ কয়েক বছর ধরে হাওর পারের জয়পুর, মন্দিয়াতা, গোলাবাড়ি, রংচি রূপনগর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক ঐ পতিত স্থানগুলোতে বোরো ধান চাষবাদ শুরু করেন। চাষাবাদ শুরু করলেও রামসার সাইট হওয়ার কারণে টাঙ্গুয়া হাওর পারে কোন বেড়ি বাঁধ কিংবা কোন ক্লোজার বাঁধে কখনো কোন বরাদ্দ দেয় নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতি বছরই কৃষক নিজেরা মিলে বাঁধটিতে কাজ করেন। চলতি বছর হাওর পারের কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮ লক্ষা টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। যা বাঁধের মাটির কাজের জন্য অপ্রতুল।
গত সপ্তাহ খানেক হতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সেই সাথে নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। পানি বৃদ্ধির পর থেকে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়ে। বাঁধটি রক্ষার জন্য গোলাবাড়ি, জয়পুর, মন্দিয়াতা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন এক সপ্তাহ ধরে। কিন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে বাঁধে কাজ করেও শেষ রক্ষা করতে পারিননি কৃষক।
গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষক খসরুল আলম, তিনি জানান শনিবার সকালে পানির থোরে নজরখালি বাঁধটি ভেঙ্গে হাওরে রোপণকৃত সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে যায়।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, হাওরটি রামসার সাইট ও জলাভূমি প্রধান হলেও হাওরের চতুরপাশে উঁচু জমিতে কৃষক বোরো ধান চাষাবাদ করেন। তাই কৃষকদের কথা চিন্তা রেখে টাঙ্গুয়া হাওরের নজরখালি বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রায়হান কবির বলেন, টাঙ্গুয়া হাওর মূলত জলাশয় প্রধান। বোরো ফসল প্রধান নয়। হাওরপারে কিছু উঁচু কান্দাতে কৃষক ধান চাষাবাদ করেন। পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি রোজ বদ্ধি পাচ্ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নজরখালি বাধটি ভেঙ্গে টাঙ্গুয়া হাওরে পানি প্রবেশ করছে।