রমজানের আর মাত্র দু’দিন বাকি, এরপরও বাজারে স্বস্তি নেই

8

স্টাফ রিপোর্টার :
আর মাত্র দু’দিন পর শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। নগরীর নিত্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজ ছাড়া সব ধরনের দাম উর্ধ্বমুখী। দামে নেই স্বস্তি। গত কদিনে ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আগে থেকে চড়া দামে বিক্রি হওয়া চালের দাম রোজা শুরুর আগে আরও কিছুটা বেড়েছে। ফলে চালের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা ঘিরে একমাস আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রোজায় ইফতারের অন্যতম উপকরণ ছোলা, বুটের ডাল, খেজুরের পাশাপাশি চাল, আটা, ময়দা দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। গত কদিনে ছোলা, বুটের ডাল, বেসনের দামও বেড়েছে। চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী।
এদিকে তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে সরকার সম্প্রতি ভোজ্যতেল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়েছে। কিন্তু তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি তেলের বাজারে। এখনো অস্বাভাবিক দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সিলেটে আবারও সোয়াবিন তেল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে।
নগরীর কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, গতকাল সকাল থেকে অর্ডার অনুযায়ী মাল দিচ্ছে না সোয়াবিন কোম্পানিগুলোর ডিলাররা। ডিলারদের বিরুদ্ধে কৃত্রিত সংকট তৈরির অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা চাল এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। মান অনুযায়ী মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। মাসখানেক আগেও মোটা চালের কেজি ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মোটা চালের দাম নতুন করে খুব একটা না বাড়লেও চিকন চালের দামে আগুন। প্রতি কেজি চিকন চাল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকায়। কিছুদিন আগেও এ চালের কেজি ছিল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা। আর মাসখানেক আগে ছিল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা। এছাড়া মাঝারি মানের চালের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, যা মাসখানেক আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে।
চালের এ বাড়তি দামের মাঝে গত কদিনে ছোলা, বুটের ডাল, মশুরের ডালসহ বেসনের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বুটের ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকা। কদিন আগেও ১০০-১০৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোট দানার মশুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। মাঝারি দানার মশুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-৯০ টাকা কেজি। অপরদিকে বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৭০ টাকার মধ্যে।
ডাল ও বেসনের এ দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার আর দুই অথবা তিন দিন বাকি। তাই সবাই এখন রোজার কেনাকাটা করছে। রোজার কারণেই ছোলা, বুটসহ বিভিন্ন ডালের দাম বেড়ে গেছে। সে কারণে বেসনের দামও বেড়েছে। রোজা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমতে পারে।
গত কদিনে আটা ও ময়দার দাম নতুন করে বাড়েনি। তবে আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া আটা-ময়দা ক্রেতাদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। বাজারে খোলা আটার কেজি এখন ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং খোলা ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। এদিকে ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট কমালেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। দুয়ারে রোজার মাস কড়া নাড়ায় ইফতারির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দামও নতুন করে বেড়েছে। গত কদিনে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে খেজুরের দাম। মান অনুযায়ী, খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষের উঠছে নাভিশ্বাস। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।