শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়

5

মাত্র এক যুগ আগেও শতভাগ বিদ্যুৎ কল্পনা করাও ছিল কঠিন। শহরগুলোতে দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই ছিল লোডশেডিং। গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। দিনরাতে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের অভাবে ব্যাহত হতো বোরো চাষ। সেই সময়ের ভয়াবহ চিত্র পত্রিকার পাতায় কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পে স্থান পায় বিদ্যুৎ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মানুষকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করেন তিনি। শুরু হয় তাঁর সাহসী যাত্রা। অনেক বাধা, সমালোচনা তুচ্ছ করে তিনি আমূল পরিবর্তন আনেন বিদ্যুৎ খাতে। পরিবর্তন করেন প্রচলিত আইন। কুইক রেন্টাল পাওয়ারে স্বল্প মেয়াদী প্রকল্পে শুরু হয় তার এই যাত্রা। এর পর আসে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প। ২৭টি দিয়ে শুরু করে এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫০টি। এর মধ্যে তেল-গ্যাসভিত্তিক প্রকল্প যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে পানি ও কয়লাভিত্তিক প্রকল্প। খুব শীঘ্রই যুক্ত হবে অত্যাধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতসব আয়োজনের ফল হিসেবে বর্তমানে দেশের শতভাগ মানুষ রয়েছে বিদ্যুতের আওতায়। গত সোমবার পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আজ আলোর পথে যাত্রার সফলতার দিন। ওয়াদা করেছিলাম প্রতিটি মানুষের ঘর আলোকিত করব। প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে। আলোর পথে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। প্রতিটি ঘরে আলোকিত হয়েছে। এখন প্রতিটি মানুষকে আলোকিত করার অভিযাত্রা।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের কথা চিন্তাও করতে পারত না। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো মাত্র ১৫শ’ মেগাওয়াট। আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৩শ’ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নতুন কোন বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হয়নি। কেন্দ্রগুলো পুরনো হওয়ার কারণে পাঁচ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছিল ৩২শ’ মেগাওয়াট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও নানা জটিলতায় সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ। সঞ্চালন লাইনের কারণে মাঝে মধ্যে কোন কোন এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলেও এখন এই খাতে কোন সঙ্কট নেই। বিদ্যুতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা। এই বাস্তবতা সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছিলেন। এর ফল হিসেবেই আজ আলো জ¦লেছে ঘরে ঘরে। এই আলোতে আলোকিত হবে দেশের প্রতিটি মানুষ।