শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা রোধে কাউন্সিলিং

10

২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন শীর্ষক সংবাদটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আত্মহননকারীদের ৬১ শতাংশের বেশি ৬২ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। আত্মহত্যার প্রবণতা ছাত্রীদের চেয়ে বেশি ছাত্রদের। একই সময়ে মেডিক্যাল কলেজ ও অনার্স কলেজের ১২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সংখ্যায় যা ২৩। ২০২০ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ৭৯ জন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ৫০ জাতীয় দৈনিক স্থানীয় পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণ করে পরিচালনা করেছে গবেষণাটি। আঁচলের মতে, আর্থিক টানাপোড়েন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যাহত লেখাপড়া, পরীক্ষায় পাস-ফেল নিয়ে দুশ্চিন্তা, পারিবারিক হতাশা, বিষণ্নতা, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে বেশি ঘটেছে আত্মহত্যার ঘটনা। তবে এ কথা সত্য যে, করোনা অতিমারীর নিদারুণ ও মর্মান্তিক অভিঘাত আত্মহত্যার প্রবণতার জন্য দায়ী বহুলাংশে।
মনে রাখতে হবে যে, আত্মহত্যা প্রবণতা এক ধরনের ব্যাধি বা মনোবিকলন, যা প্রতিরোধযোগ্য সামাজিক ও পারিবারিকভাবে। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন কাউন্সেলিং বা মানসিক পরিচর্যা। তবে দেশে সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও সে ব্যবস্থা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলে একজন করে মনোবিজ্ঞানী থাকলেও ছাত্রদের হলে তা নেই। রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তা রয়েছে সীমিত পরিসরে। এই খাতে কোন দক্ষ জনবল ও বাজেট বরাদ্দও নেই। ফলে দিন দিন সমস্যা বাড়ছেই।
মানুষের মৃত্যুসহ স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার বাইরে সমূহ ক্ষতির তালিকায় রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও শিক্ষা, সর্বোপরি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান। প্রায় সর্বত্র দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি ও পরিবেশ। ফলে অনিবার্য বেড়েছে বিচ্ছেদ, নিঃসঙ্গতা, বিষণ্নতা, হতাশা, মাদকাসক্তি, মনোবিকলন ইত্যাদি, যেসব কাজ করছে আত্মহননের পেছনে। এহেন বিপন্ন অবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে উদ্ধার করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবার, সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সরকারকে।