বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মাতৃতুল্য ॥ বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে-বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এমপি

10
কমলগঞ্জে কুরমাঘাট-কমলপুর বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে দুদেশের মন্ত্রী ও অতিথিবৃন্দ।

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মাতৃতুল্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দুই মহান ব্যক্তির মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন তরাম্বিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের ৮টি স্থানে বর্ডার হাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি নিয়ে ৩টি বর্ডার হাট চালু হতে যাচ্ছে। এই বর্ডার হাট স্থাপনের মধ্যদিয়ে দু’দেশের মানুষ পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন।
বার্ডার হাট নির্মাণের মাধমে দু’দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক ও বন্ধন তৈরি করতে বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। এই মহতি উদ্যোগের জন্য আমি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমনিতেই দুই দেশের মধ্যে সু- সম্পর্ক রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমাঘাট- ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দলই জেলার কমলপুর ভারত সরকারের অর্থায়নে ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্ডার হাটের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক ভাবে ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি এমপি বলেন, সীমান্ত হাট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দু’দেশের মানুষের মধ্যে মেল বন্ধন সৃষ্টি হবে। এই বর্ডার হাট স্থাপনের কারণে সীমান্তে চোরাচালানী বন্ধ হয়ে যাবে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সীমান্তবর্তী মানুষ হাতের নাগালে পাবে। স্থানীয়রা নানা পণ্য হাট থেকে কিনতে পারবে। এতে দু’দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বও বাড়বে। এছাড়া পর্যটনের ক্ষেত্রেও প্রসারতা লাভ করবে। আজকে আমরা ফাইন্ডেশন দিলাম। এই হাট চালু হলে রিমোর্ট এলাকার মানুষ জন উপকৃত হবে। আমরা পাশাপাশি দুই দেশ। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরো বেগমান হবে।
ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আরো বলেন, বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ট্রেন যাচ্ছে, ট্রেন আসবে। দু’দেশের ট্রেন যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে জলপথ খুলে গেছে। ভারতের মধ্যদিয়ে নেপালী বাংলাদেশ থেকে ট্রান্সপোর্টেশন করছে। আমরা পারবো না কেন? ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলো একসঙ্গে উঠতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা একত্রিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে মন্ত্র দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যে দায় করেছেন সেটা আজকের এই পদক্ষেপে অনেক শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ট্রেন যাচ্ছে, ট্রেন আসবে। দু’দেশের ট্রেন যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে জলপথ খুলে গেছে। ভারতের মধ্যদিয়ে নেপালী বাংলাদেশ থেকে ট্রান্সপোর্টেশন করছে। আমরা পারবো না কেন? ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারছে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? আমরা একত্রিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে মন্ত্র দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যে দয়া করেছেন সেটা আজকের এই পদক্ষেপে অনেক শক্তিশালী হবে। দেশগুলো যেভাবে এতো উন্নত হলো আমরা কেন পারবো না? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আসার পর দেখেছি একসময় ত্রিপুরা থেকে ২৭ লক্ষ টাকা এক্সপোর্ট হতো, এখন ১৩৪ কোটি টাকা ত্রিপুরা দিয়ে এক্সপোর্ট হয় বাংলাদেশে। এক সময় সেটি বেনাপোল দিয়ে হতো। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ব্রিজ ইতিমধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাকে খুবই খুশি লাগে যখন মানুষ এই ব্রিজে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে তাতেই প্রতীয়মান যে দু’দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমাঘাট সোনারায় এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলার কমলপুর মোড়াছড়া সীমান্ত হাট এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কুমার দেব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, ভারতীয় দুতাবাসের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট রুমানা ইয়াসমিন, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী সহ বিজিবি ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলেমান মিয়া ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন সেক্টরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে দুই দেশের নোম্যান্স ল্যান্ডে ২.৭২ একর ভূমিতে কুরমাঘাট-কমলপুর মোড়াছড়া বর্ডার হাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারত সরকারের অর্থায়নে ৫ কোটি ৩০ লাখ রূপী ব্যয়ে এই বর্ডার হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হাটের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে এবং ভারতের দিকে আরেকটি ফটক থাকবে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে মূল অনুষ্ঠানটি ভারতের ত্রিপুরার কমলপুর মোড়াছড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গলবার ও শুক্রবার এই হাট বসবে। তবে স্থানীয়দের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় একাধিক দিনও হাট বসার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাটে বেচাকেনা করা যাবে। তৈরি পোশাক, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মুরগি, শুঁটকি, সুপারি প্রভৃতি পণ্য বেচাকেনা চলবে বর্ডার হাটে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল সীমান্ত হাট কার্যক্রম। সীমান্ত হাটের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারি সীমান্তে সোনাভরি নদের তীরে। উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাঙ্গা করে একদিকে তাদের জীবিকার সংস্থান করা এবং অন্যদিকে তাদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন।
আলাপকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক জানান, সীমান্ত হাটের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা। তিনি আরও বলেন, ‘বিজিবি’র যে মূল দায়িত্ব নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধ তা সার্বক্ষণিকভাবে বিজিবি মনিটর করে থাকবে।’ সীমান্ত হাটের আশপাশের ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসবাসরত জনগণ এই হাট থেকে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করার সুযোগ পাবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল সীমান্ত হাট কার্যক্রম। সীমান্ত হাটের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারি সীমান্তে সোনা ভরি নদের তীরে। উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তের দুই পারের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাঙ্গা করে একদিকে তাদের জীবিকার সংস্থান করা এবং অন্যদিকে তাদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন। এর আর একটি উদ্দেশ্য ছিল দুদেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা।