আইনের শাসন

5

দেড় বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রায় হয়েছে চাঞ্চল্যকর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার। টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই সংঘটিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী হত্যাকান্ড মামলার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ২৯ কার্যদিবসে। রায় নিয়ে বাদীপক্ষের কিছ্টুা অসন্তুষ্টি থাকলেও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করায় দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে অনেক। রায়ে বিচারক বলেছেন, এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মোট ১৫ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্তকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দেয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এরা সরাসরি জড়িত ছিল হত্যাকান্ডের সঙ্গে। হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের তিন সোর্সকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এদের মধ্যে রয়েছে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এএসআই সাগর দেব, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোঃ আয়াজ। আসামিদের মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য এবং তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
সিনহা হত্যাকান্ড সাধারণ কোন খুনের ঘটনা নয়। দেনা-পাওনা নিয়ে কিংবা প্রবল মতবিরোধে ব্যক্তি আক্রোশে ঘটেনি এই খুনের ঘটনা। এর পেছনে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি চক্রের ধারাবাহিক অপরাধ প্রক্রিয়া। আইনকে পুঁজি করে এই চক্র নিজেদের আখের গোছাতে জড়িয়ে পড়েছিল নানা অপকর্মে। মামলার অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তার অপরাধের চিত্র। এই কর্মকর্তা নিজের অপরাধ ঢাকতে তার সহকর্মীদের দিয়ে সিনহাকে হত্যা করেছিল। অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাদক নির্মূলের নামে টেকনাফ থানায় নিরীহ মানুষের ওপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের কাহিনী জেনে গিয়েছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা ও তার সঙ্গীরা। প্রদীপের অত্যাচারের শিকার কিছু মানুষের সাক্ষাতকারও তারা নিয়েছিলেন। পরিণতিতে এই নির্মম হত্যাকান্ড। পরবর্তী সময় প্রদীপ-লিয়াকতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল কক্সবাজার পুলিশ। মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল সিনহার সঙ্গে থাকা দুজনকে। সত্য একদিন ঠিক বের হয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার পুলিশের কোন চেষ্টাই সফল হয়নি। সেই মৃত্যু নাড়িয়ে দেয় পুরো দেশকে। কক্সবাজারের পুলিশ বিভাগের খোল-নলচে পাল্টে ফেলতে বাধ্য হয় সরকার। রায়ের মাধ্যমে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় আইনের শাসন।