এখনও মামলা হয়নি, কানাইঘাটে নিহত ফরিদের লাশ দাফন

12

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গত সোমবার সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় দিন দুপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার ফরিদ উদ্দিনের লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখন পর্যন্ত কোন মামলার দায়ের করা হয়নি।
জানা যায়, মঙ্গলবার ময়না তদন্তের পর নিহত ফরিদ উদ্দিনের লাশ সন্ধ্যার দিকে তার নিজ বাড়ী খাসাড়ীপাড়া গ্রামে নিয়ে আসলে পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বাদ এশা নিহতের জানাযার নামাজ স্থানীয় খাসাড়ীপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযার নামাজে এলাকার হাজারো লোকজন শরীক হন। এ সময় ফরিদ উদ্দিনের প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান অনেকে। থানার ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হকের সাথে কথা হলে তিনি জানান নিহতের লাশ পরিবারের কাছে ময়না তদন্তের পর বুুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত নিহত ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে আমরা নিহতের পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে কথা বলেছি তারা অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, নৃশংস ভাবে হত্যাকান্ডের শিকার ফরিদ উদ্দিনের খুনিদের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিবিড় তদন্ত চলছে। সীমান্তবর্তী দূর্গম এলাকায় খুনিরা হত্যাকান্ড দ্রুত সংঘটিত করে পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের চিরুনী অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান। ওসি (তদন্ত) আরো বলেন, ফরিদ উদ্দিনকে যখন কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয় সে সময় তার সাথে শাহিন আহমদ নামে আরো একজন ছিলেন। সেও আহত হয়েছে, তার সাথে আমরা কথা বলছি। কিন্তু খুনিরা মুখোশ পরে হত্যাকান্ড সংঘটিত করায় শাহিন আহমদ তাদের চিহ্নতে পারেননি। পূর্ব বিরোধ ও ফেইসবুকে লেখালেখি নিয়ে এ হত্যাকান্ডটি ঘটতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। অধিকতর তদন্ত সহ সেটি মাথায় রেখে পুলিশ ফরিদ উদ্দিনের খুনিদের আটক করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান। প্রসঙ্গত যে, গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের খাসাড়ীপাড়া গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে ফরিদ উদ্দিন (৩৩) স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে মোটর সাইকেল যোগে নিজ বাড়ীতে ফেরার পথে বড়খেওড় গ্রামের এফআইডিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তার উপর কয়েকজন মুখোশপরা দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফরিদ উদ্দিনের দু’পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম করলে ঘটনাস্থলেই তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন নিহত ফরিদ উদ্দিনের সাথে লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের বিরোধ চলে আসছিল। অনুমানিক আড়াই বছর পূর্বে নাজিম উদ্দিনকে ফরিদ উদ্দিন মারধর করলে তার বিরুদ্ধে সে সময় মামলা করেন নাজিম উদ্দিন। এরপর বছর খানিক পূর্বে নিহত ফরিদ উদ্দিনের সমন্দিক কয়ছর আহমদকে কুপিয়ে দুর্বৃত্তরা এক পা বিচ্ছিন্ন করে ফেললে সেই মামলায় নাজিম উদ্দিন সহ কয়েকজনকে আসামী করা হয়। সেই মামলায় নাজিম উদ্দিন জেলও খাটেন। মাস খানিক পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নাজিম উদ্দিন লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড থেকে মেম্বার পদে নির্বাচিত হলে ফরিদ উদ্দিন তার ফেইসবুক আইডিতে ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। এর জের ধরে নাজিম উদ্দিনের জার্মান প্রবাসী ভাই এনাম খান নামক ফেইসবুক আইডি থেকে ফরিদ উদ্দিনের মেসেঞ্জারে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিলে নিহত ফরিদ উদ্দিন মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্ব থেকে তার ফেইসবুক আইডিতে হুমকির বিষয়টি পোস্ট করেন। ফেইসবুকে লেখালেখি নিয়ে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছেন। তবে পুলিশ ফেইসবুকে লেখা লেখির পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, খাসারীপাড়া, মিকিরপাড়া, এরালীগুল, সোনারখেওড়, দনা এলাকায় গত ২/৩ বছর থেকে নানা বিরোধের সূত্রপাত বেশে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ২ বছর পূর্বে ইউপি সদস্য আহমদ এর উপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তাকে পা কেটে পঙ্গু করে। এক পা হারিয়ে শেষ পর্যন্ত মারা যান তিনি। মামলার আসামীদের সাজা শাস্তিও হয়নি। এর পর স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রবের উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারাত্মক ভাবে আহত করা হলে এখনো পর্যন্ত তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। এরই মধ্যে তার প্রতিপক্ষ লোকজন আবারো কয়েকদিন পূর্বে আব্দুর রবের উপর দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার দু’পা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ভেঙ্গে ফেললে বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। এর আগে বছর খানিক পূর্বে নজরুল ইসলাম @ নজু নামে একজনকে হত্যা করা হয়। সেই মামলার অনেক আসামী এখনো পর্যন্ত পলাতক রয়েছে। এছাড়াও বছর খানিক পূর্বে কয়ছর আহমদ নামে এক যুবককে অনুরুপ ভাবে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এক পা বিচ্ছিন্ন করে। সে এখন পঙ্গু অবস্থায় দিন যাপন করছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন একের পর এক লৌহমর্ষ ঘটনা ঘটলেও অনেক ক্ষেত্রে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীরা মামলার আসামী না হওয়ার কারনে এ ধরনের ঘটনা বার বার এলাকায় ঘটছে।