সাপোর্ট ভেসেল চলাচলে নিয়মের কোন তোয়াক্কা নেই

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশীয় আইন উপেক্ষা করে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী জলসীমায় গত ৪ বছর ধরে চলাচল করছে বেশ কিছু সাপোর্ট ভেসেল। এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালকেন্দ্রিক চলাচলরত। এসব ভেসেল সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এবং বিদেশী নাবিক দিয়েই চলছে। এতে করে এর বিপরীতে নিয়ত মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আইনী বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশী নাবিকরা এ জাতীয় ভেসেলে কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে মেরিন সার্ভিসের বিভিন্ন সংস্থা নৌপরিবহন অধিদফতরে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। কিন্তু কোন সুফল মিলছে না।
সূত্র জানায়, এসব সাপ্লাই ভেসেলের আইন ও বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম নিয়ে ২০১৯-এ অধিদফতরকে অবহিত করা হলে চট্টগ্রাম এমএমও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়। ফলে এ জাতীয় ভেসেলে কিছু বাংলাদেশী নাবিকও তালিকায় নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়।
সূত্র জানায়, বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজ বা সাপ্লাই ভেসেল বাংলাদেশী জলসীমায় চলাচল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং সেইফ ম্যানিং রেগুলেশন ১৯৯০-এর ১৪ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা মোতাবেক শিপ সার্ভেয়ারদেরকে নিয়মিতভাবে পরিদর্শন, সার্ভের মাধ্যমে জাহাজের সেইফ ম্যানিং নিশ্চিত করতে হয়। অথচ, বহির্নোঙ্গর থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত চলাচলরত এসব সাপোর্ট ভেসেল পিএসও (পোর্ট স্টেট কন্ট্রোল) সার্ভেয়ার দিয়ে প্রতিমাসে সার্ভে করানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ফলে এসব সাপ্লাই ভেসেলের অপারেটর কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত এ দেশের আইন, বিধিবিধান লঙ্ঘন করেই চলেছে।
সূত্র জানায়, যেখানে কোন বাংলাদেশী নাগারিকের বিদেশী সনদ থাকলে বাংলাদেশী জলসীমায় জাহাজ চালানোর ক্ষেত্রে বিএমএসও কোর্স সম্পাদন করে নৌপরিবহন অধিদফতর থেকে সিডিআর গ্রহণ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে এসব বিদেশী পতাকাবাহী সাপোর্ট ভেসেল চলছে সম্পূর্ণ বেআইনী পন্থায়। ফলশ্রুতিতে এসব ভেসেলের বিদেশী ক্রু, অফিসাররা সরকারের অজ্ঞাতসারে নিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা, যা দেশীয় আইনে দ-নীয় অপরাধ। প্রতিটি বিদেশী নাগরিক মাসিক কমপক্ষে ৫০ হাজার ডলার হারে তাদের নিজ দেশে অবৈধপথে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে পরিসংখ্যান রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, এ জাতীয় জাহাজ পরিচালনায় বেজ অপারেশনে বাংলাদেশ কম্পিটেন্সি সনদধারী ইঞ্জিনিয়ার, মেরিন সুপার নিয়োগ না করে বিদেশীদের দিয়ে পরিচালনা অত্যন্ত গর্হিত এবং বেআইনী।
অপরদিকে, কিছু ভেসেলে বাংলাদেশী নাবিক, অফিসার মাঝেমধ্যে নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় যাতে তারা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। অভিযোগ রয়েছে, পিএসএ মেরিন পরিচালিত ৫ জাহাজে মোট নাবিক, অফিসার অনবোর্ড রয়েছে ৩৮। যার মধ্যে ১৭ নাবিক, ২১ অফিসার। যার মধ্যে ১৫ অফিসারই বিদেশী।
এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, নৌপরিবহন অধিদফতরের সার্কুলার ও বিধিবিধান অনুযায়ী এ জাতীয় ভেসেলে বাংলাদেশী জলসীমায় অপারেশনের শুরুতে ৫০ শতাংশ এবং ১২ মাসের মধ্যে বাংলাদেশী নাবিক, অফিসার নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এসব জাহাজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী আইনের ধার ধারছে না। পিএসসির এমএলসি শিপ সার্ভেয়ার পাঠানো হয় না।
সূত্র জানায়, এ জাতীয় ভেসেল চলাচলে বাংলাদেশ মেরিটাইম বিধি কড়াকড়িভাবে মেনে চলা, প্রতিমাসে পিএসসির এমএলসি শিপ সার্ভেয়ার দিয়ে পরিদর্শন করানো, বাংলাদেশী নাবিক, অফিসার, মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার শতভাগ নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হলে নৈরাজ্য আরও বাড়বে।