যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবে সরকার

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাব ও এর ছয় জন সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সমন করা হয়। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) মৌখিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্নমুখী সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে চায় ঢাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি তাদের জানিয়েছি।’ ওই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। কিন্তু একইসঙ্গে দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও যোগাযোগ রয়েছে। সেটি অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে বৃদ্ধি পাবে।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ভারসাম্যগত কোনও পরিবর্তন আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার সবসময় সব পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি। তবে একইসঙ্গে এটাও ঠিক, বর্তমান বাংলাদেশ এবং ২০ বছর আগের বাংলাদেশ এক নয়।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় রাজনৈতিক সমঝোতা
২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা একত্রিত হতেন এবং রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতেন।’
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক সূচকে ভালো অবস্থান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বললে যেভাবে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া হতো, এখন সেভাবে হয় না।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ড. ইউনূসকে নিয়ে বা শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ ভালোভাবে নেয়নি। ওই সময়ে এই বার্তা পরিষ্কারভাবে দেওয়া হয়েছিল।’
বাংলাদেশের ক্ষোভ
ওয়াশিংটন আশা করে, ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণে ঢাকা তাদের পাশে থাকবে কিন্তু একইসঙ্গে এজন্য তারা বড় ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে অনেক তির্যক মন্তব্য করেছিল, কিন্তু তারা এমন কোনও কাজ করেনি যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যুক্তরাষ্ট্র। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটার দুই মাসের মধ্যে দেশটি বাংলাদেশের সীমিত যে কয়েকটি পণ্য (এরমধ্যে তৈরি পোশাক নেই) জিএসপি সুবিধা পেতো সেটি তারা বাতিল করেছিল। যা রাজনৈতিক কারণে হয়েছিল বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।’
প্রসঙ্গত, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশ করে।
ওই সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘সব উন্নত দেশ এবং কিছু উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই সুবিধা না দেওয়াটা রাজনৈতিক।’
বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার সেটির বিবেচনায় মার্কিন বিনিয়োগ অনেক কম এবং এর বড় একটি অংশ জ্বালানি খাতে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মার্কিন বিনিয়োগ বাড়লে সেটির বড় প্রভাব থাকতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।’
অবকাঠামো খাতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে চীন, জাপানসহ অনেক ধনী দেশ বাংলাদেশকে সহায়তা করলেও যুক্তরাষ্ট্র তেমনভাবে সহযোগিতা করে না বলেও তিনি জানান।
বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে এবং তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বারবার অনুরোধ উপেক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী রাজনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে বা পেতে চাইছে সেটি পরিষ্কার নয়। বরং তাকে ফেরত দিয়ে দিলে ১৯৭১ ও ১৯৭৫-এর ঘটনাবলি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মানুষের যে ধারণা সেটির হয়তো পরিবর্তন হতো।’
মানবাধিকার কাউন্সিল
বাংলাদেশসহ যেকোনও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল। ওই জোটে বাংলাদেশও অত্যন্ত তৎপর।
মানবাধিকার কাউন্সিল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কূটনীতিক বলেন, ‘র‌্যাবের কার্যকলাপসহ অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে ওই জোটে বাংলাদেশ তাদের বক্তব্য দিয়ে থাকে। বহুপাক্ষিক সিস্টেমের অধীনে বাংলাদেশ যে ব্যাখ্যা দেয় সেটি সব দেশের জন্য প্রযোজ্য এবং দ্বিপক্ষীয়ভাবে কোনও দেশ যদি এ বিষয়ে আলোচনা করতে চায় তবে একই ব্যাখ্যা তাদেরও দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকার চায় না অন্য একটি দেশ এককভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। এতে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো হয়’।