পাবলিক পরীক্ষার ফাঁদে ইউপি নির্বাচন

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পরিকল্পিত সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। করোনার কারণে পিছিয়ে পড়া ইউপি নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার ঘোষণা দিলেও সেটা হচ্ছে না। এই ভোট গড়াচ্ছে আগামী বছর জানুয়ারিতেও। ওই মাসে দুই দফায় বাকি ইউপির নির্বাচন শেষ করতে চাচ্ছে ইসি। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনও জানুয়ারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসি তার মেয়াদ পার করতে চায়। এদিকে চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণের দিন ২৩ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা থাকার কারণে ওই নির্বাচন তিনদিন পিছিয়ে ২৬ ডিসেম্বর পুননির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের নির্বাচন উপযোগী চার সহস্রাধিক ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ইসি। এ লক্ষ্যে ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ৩৭১টি ইউপিতে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ৩ মার্চ তফসিল ঘোষণা করে ইসি। কয়েকটি ধাপে জুনের মধ্যে ভোট শেষ করার চিন্তা করলেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তাতে ব্যাঘাত ঘটে। করোনার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির কারণে ১১ এপ্রিলের ভোটও স্থগিত করতে বাধ্য হয় ইসি। পরে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় ৩৬৪টি ইউপির ভোট সম্পন্ন করে।
এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ইসি আগস্ট মাসে নতুন করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন উপযোগী সব ইউপি ভোট, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ করার ঘোষণা দেয়। এমনকি নভেম্বরের মধ্যেই ইউপি ভোট সম্পন্ন করার টার্গেটও তারা নির্ধারণ করে। এই অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার জন্য ১ সেপ্টেম্বর কমিশন সভাও ডাকে ইসি। এর আগে ২৬ আগস্ট তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকও করে।
জানা গেছে, ওই বৈঠকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন চূড়ান্ত না হওয়ায় তারা পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়সীমার কথা ইসিকে জানিয়ে পরীক্ষার সময় ভোটের তারিখ না ঘোষণার অনুরোধ করে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ১ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণার জন্য ইসি কমিশন সভা ডাকলেও সেখানে তফসিল ঘোষণা হয়নি। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ইসির পরবর্তী সভা শেষে ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করে তফসিল দেয় ইসি। ওই তফসিল দেওয়ার সময়ও ইসি ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য দৃঢ় অবস্থানের কথা গণমাধ্যমকে জানায়। এমনকি সব ইউপি ভোট শেষ করে ভোটার তালিকা তৈরি করে ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানায় ইসি। পরে অবশ্য জেলা পরিষদের ভোট জানুয়ারিতে অনুষ্ঠানের কথা জানানো হয়। তবে জানা গেছে, বর্তমান কমিশনের মেয়াদে জেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠানের কোনও সম্ভাবনা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা হলেও এসএসসি পরীক্ষার কারণে দুই সপ্তাহের বেশি বিরতি দিয়ে ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে তফসিল দেয় ইসি। গত ১৪ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে এসএসসি পরীক্ষার পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষার কারণে চতুর্থ ধাপের ইউপি ভোটও পিছিয়ে দেয় ইসি। এক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপের ২৫ দিন পর ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ভোটের জন্য তফসিল ঘোষণা করে। পরে অবশ্য ওইদিন এইচএসসি পরীক্ষা থাকার কারণে তা আরও পিছিয়ে ২৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে পূর্বঘোষিত ডিসেম্বরের মধ্যে ইউপি নির্বাচন শেষ করার ঘোষণা বাস্তবায়নে সোমবার (২২ নভেম্বর) পঞ্চম ধাপে বাকি সবগুলো ইউপির তফসিল ঘোষণার জন্য কমিশন সভা ডেকেছিল ইসি। তবে, এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনড় অবস্থান এবং পরীক্ষার তারিখের বাইরে ডিসেম্বরের মধ্যে ফাঁকা কোনও দিন না থাকায় ইউপির বাকি ভোট জানুয়ারিতে অনুষ্ঠানের জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার কারণে ওই দিন বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। জানুয়ারিতে ভোট করার লক্ষ্যে ভোট ও তফসিলের মধ্যবর্তী সময় বিরতির বিষয়টি মাথায় রেখে ২৭ নভেম্বর শনিবার পর্যন্ত ইসির বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। এদিকে একধাপে বাকি সব ভোট করার পরিবর্তে ভেঙ্গে দুই ধাপে করার চিন্তাও করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার অভিমত পরীক্ষার কারণ হলে আমি নির্বাচন পেছানোর পক্ষে। কারণ এতদিন পরে বাচ্চাগুলো (শিক্ষার্থী) পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষার তারিখ পেছানো হলে তাদের মন ভেঙে যাবে। সেই তুলনায় নির্বাচন পেছালে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ২৭ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একটি ধাপের শিডিউল ঘোষণা হবে। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরেই ইউপি ভোট শেষ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ওই ধাপের ভোট জানুয়ারিতেই চলে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাকি ইউপির ভোটগুলো একটি ধাপেই অনুষ্ঠানের জন্য ইসি সচিবালয় প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে, ইউপির সংখ্যা অন্য ধাপগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি। সেক্ষেত্রে হয় তো দুটি ধাপেও সম্পন্ন করা হতে পারে।
২৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তফসিলও ঘোষণা হতে পারে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের ৩৬৪টি এবং ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আগামী ২৮ নভেম্বর দেশের এক হাজার ৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর (তফসিলে ছিল ২৩ ডিসেম্বর) ৮৪০টি ইউপিতে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় চার হাজারের মত ইউপিতে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।