ভেঙ্গে দেয়া হল কমলগঞ্জের কানিহাটি চা বাগানে চোলাই মদের ১০টি আখড়া

27
কমলগঞ্জের পানিহাটি চা বাগানে চোলাই মদের আস্তানা উচ্ছেদ করছে পুলিশ।

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কানিহাটি চা বাগানে এলাকাবাসী ভেঙ্গে দিয়েছে চোলাই মদ তৈরীর দশটি আখড়া। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে এসব চোলাই মদের আখড়া ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
দেশের বিভিন্ন চা বাগান সমূহে ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত হয়ে আসা মাদকের যে বেচা কেনা ছিল তা এখনও অব্যাহত আছে। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর সন্ধ্যা হলেই মাদক সেবন করে মাতাল শ্রমিকরা পরিবারে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে ঝগড়াঝাটি, হানাহানি, ভাঙচুর সহ নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। ফলে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও পরিবার সদস্যদেরকে বিপর্যস্ত করে ফেলছে চা বাগানের মাদকাসক্ত পুরুষরা। নেশায় বিপর্যস্ত করে ফেলা চা বাগান এলাকাকে মাদক মুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর জাগরণ যুব ফোরামের আয়োজেন প্রথম বারের মতো সোমবার (১৩ আগষ্ট) সকাল ১১ টায় শোভাযাত্রা কয়েকটি পথসভা শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চা বাগান থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শমসেরনগর বাজার প্রদক্ষিণ শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জাগরণ যুব ফোরামের আয়োজনে মাদক বিরোধী শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মূলে ছিল চা শ্রমকি, ছাত্র ও যুবকরা। সে সমাবেশে ঘোষণা করা হয়েছিল এখন থেকে আর চা বাগানের কোন শ্রমিক ঘরে চোলাই মদ তৈরী করা যাবে না। যদি চোলাই মদ তৈরী করা হয় তা হলে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে চোলাই মদ তৈরীর আখড়া ভেঙ্গে চুড়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হবে। মাদক বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শমসেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ, শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী, ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সীতারাম বীন ও জাগরণ যুবফোরাম সভাপতি মোহন রবিদাসের নেতৃত্বে কানিহাটি চা বাগানে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানে কানিহাটি চা বাগানের ১০টি শ্রমিক ঘরের চোলাই মদ তৈীর আখড়া ভেঙ্গেচুড়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযানে কানিহাটি চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি প্রতাপ রিকিয়াসনও উপস্থিত ছিলেন।
শমসেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ ইউনিয়নের মূল ও ফাঁড়ি বাগানে পুলিশি উপস্থিতিতে সামাজিক বৈঠক করে চোলাই মদ তৈরী বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সাথে সাথে চা বাগানে যাতে কোন প্রকার মাদক ব্যবসা না হয় তারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর পরও কিছু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী নিজ ঘরে চোলাই তৈরী অব্যাহত রেখেছিল। তাই শনিবার অভিযান চালিয়ে সেই চোলাই মদের আখড়া ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী আকস্মিক অভিযানে চা বাগানে চোলাই মদের আখড়া গুঁড়িয়ে দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চা শ্রমিকরা খুবই স্বল্প আয়ী। এর মাঝে মাদকে সব টাকা ব্যয় করে নিজের শারীরিক ক্ষতির সাথে পরিবার পরিজনের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে এ দিক নিয়ে সামাজিক বৈঠকে বোঝানো হয়েছিল। তার পরও চোলাই মদ তৈরী হওয়ার এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। প্রথম দফা চোলাই মদের আখড়া ভেঙ্গে দেওয়া হলো।