পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি

11

গাড়ি তৈরি করছে বাংলাদেশ। তাও আবার পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি। আগামী বছরের প্রথমার্ধেই রাস্তায় দেখা যাবে দেশে তৈরি এই গাড়ি। ভাবতেই ভাল লাগছে। আমাদের ভাল লাগার বিষয় খুব কম। এর মধ্যেই যা কিছু ভাল লাগে তাই নিয়ে মেতে ওঠে বাঙালী। এ কারণেই ক্রিকেটে টাইগাররা জিতলে মেতে ওঠে গোটা দেশ, হারলে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। এখন আমাদের ভাল লাগার মতো বিষয় অবশ্য বাড়ছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় আমরা বেশ কিছু ভাল লাগার বিষয় পেয়েছি, আরও কিছু পাব শীঘ্রই। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের শহরেও চলবে মেট্রোরেল। আমরাও অতিক্রম করব নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত টানেল। এক্সপ্রেসওয়েতে বিরামহীন চলে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাব গন্তব্যে।
আমাদের দেশে রাস্তায় যেসব গাড়ি চলাচল করছে এগুলোর প্রায় সবই বিদেশী। হাতেগোনা কিছু গাড়ি আছে যা দেশে সংযোজন হচ্ছে মাত্র। এ ধরনের কারখানা রয়েছে দুটি। একটি সরকারী (প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড) এবং অপরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কারখানা-যেখানে ‘প্রোটন সাগা’ ব্র্যান্ডের গাড়ি সংযোজন করা হয়। বাকি প্রায় সব গাড়িই আমদানি করতে হয়। প্রতিবেশী ভারতে এক সময় বিদেশী গাড়ি আমদানি সংরক্ষিত ছিল। সে সময় দেশী গাড়িই ছিল তাদের ভরসা। এখন অবশ্য মুক্তবাজার নীতিতে বিদেশী গাড়ি আমদানির সুযোগ রয়েছে। তবে এখনও সে দেশের রাস্তায় বেশিরভাগ গাড়িই নিজস্ব। আমরাও এখন স্বপ্ন দেখতে পারি, একদিন রাস্তার অধিকাংশ গাড়িই হবে বাংলাদেশে তৈরি।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রায় এক শ’ একর জায়গার ওপর বিশাল কারখানা নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। চলছে গাড়ি উৎপাদনের প্রস্তুতি। বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় একদিকে যেমন জ্বালানি খরচ হবে খুব কম, অন্য দিকে হবে না বায়ু দূষণ। চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইতালির প্রযুক্তি ধারণ করে তৈরি হবে এই বৈদ্যুতিক গাড়ি। গাড়িগুলোর ৭০ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি হবে দেশেই। আমদানি হবে ৩০ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে বছরে ৩৫ হাজার প্রাইভেট কার (সেডান), ৫০ হাজার তিন চাকার যান এবং ১ লাখ ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তৈরি হবে মাইক্রোবাস, কাভার্ডভ্যান এবং মিনি ট্রাক। একটি সেডান কারের দাম রাখা হবে ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে। দেড় লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিস্তি সুবিধায় কেনা যাবে গাড়ি। পেট্রোলচালিত গাড়িতে প্রতি হাজার কিলোমিটারে সাড়ে ৫ হাজার টাকার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যয় হবে এক হাজার ২৫০ টাকা। গাড়িগুলো নিজের বাড়িতে চার্জ দেয়ার পাশাপাশি বিদ্যমান রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতেও থাকবে চার্জিং ইউনিট। কারখানায় থাকবে তিনটি ইউনিট। একটিতে তৈরি হবে গাড়ি। দ্বিতীয়টিতে যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি ও চার্জার। তৃতীয় ইউনিটে তৈরি হবে মোটর কন্ট্রোলার চার্জার। অর্থাৎ একটি গাড়ির জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই তৈরি হবে এই কারখানায়। গাড়ি শিল্পে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানাটি হবে দেশে গাড়ি শিল্পের মাইলফলক।