বিধবার মৌলিক অধিকারের নিরাপত্তা

18

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী ‘‘তবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই’’ এ মর্মার্থ হলো এটাই। তাই মহিলার উপর ইদ্দত পালন করা যথারীতি ওয়াজিব। আবূ নাজিহ এ কথাগুলো মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন। আত্বা বলেন, ইবনু আব্বাস (রা.) বলেছেন : এ আয়াতটি স্বামীর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করার নির্দেশকে রহিত করে দিয়েছে। অতএব সে যেখানে ইচ্ছা ইদ্দত পালন করতে পারে। আতা বলেন: ইচ্ছা করলে ওসিয়ত অনুযায়ী সে স্বামীর পরিবারে অবস্থান করতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে অন্যত্র ও ইদ্দত পালন করতে পারে। কেন না, মহান আল্লাহ বলেছেন: “তারা নিজেদের জন্য বিধিমত যা করবে, তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই।” আতা বলেন, এরপর মিরাছের আয়াত অবতীর্ণ হলে ‘বাসস্থান দেওয়ার’ হুকুম রহিত হয়ে যায়। এখন সে যেখানে চায় ইদ্দত পালন করতে পারে, তাকে বাসস্থান দেওয়া জরুরী নয়। “ইবনে কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, তাহকীক : সামী ইবনে মুহাম্মদ আস-সালামাহ, প্রাগুক্ত, খ.৪, পৃ.১৬৪৬; ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : আত-ত্বলাক্ব, পরিচ্ছেদ : আল্লাহর বাণী: ওয়াল্লাজিনা ইউতা ওয়াফ্ ফাওনা মিনকুম ওয়াজারুনা আযওয়াজা, প্রাগুক্ত, খ. ৫, পৃ.২০৪৪, হাদীস নং-৫০২৯”।
সন্তানের ভর-পোষণ : স্বামীর অবর্তমানে সন্তানের লালন পালনের দায়িত্ব স্ত্রীর উপরে বর্তায়। সে তার অথবা তার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তাদের লালন-পালন করবে। পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ অনুযায়ী, পিতা অক্ষম বা দরিদ্র হলে মা সন্তানের ভর-পোষণ করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রতিপালকের কাছে। “আল-কুরআন, ২:২৭৪”। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘আয়িশাহ (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু‘টি শিশু কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু‘ভাগ করে কন্যা দুটিকে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেল নবী স. আমাদের নিকট আসলেন। তার নিকট ঘটনা বিবৃত করলেন তিনি বললেন, যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয়, সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে আড় হয়ে দাঁড়াবে। “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: যাকাত, পরিচ্ছেদ: ইত্তাকুন্নারা ওয়ালাও বিশিক্কি তামরাতিন ওয়ালক্বালীলি মিনাস সাদাকাহ, প্রাগুক্ত, খ-২,পৃ.১৫৪, হাদীস নং-১৩৫২। এ প্রসেঙ্গ হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে যে,- ইমাম মুসলিম. আস-সহীহ, অধ্যায়: যাকাত, পরিচ্ছেদ : বাবু ফাদলুন নাফাকাতি ওয়অস সাদাকাতি আলাল আকরাবীন, বৈরুত:দারু ইয়াহইয়া আত্ তুরাস, খ.২, পৃ.৬৯৫, হাদীষ নং-১০০১”। এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত হয়েছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা সাত অথবা নয়টি কন্যা রেখে মারা যান। তারপর আমি এক প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাকে বিয়ে করি। রাসূলুল্লাহ (স.) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন: কুমারী না প্রাপ্তবয়স্কা? আমি বললাম প্রাপ্তবয়স্কা। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন কুমারী বিবাহ করলে না, যাতে তার সাথে তুমিও ক্রীড়া-কৌতুক করতে পারতে এবং সে ও তোমার সাথে কৌতুক করতে পারতো? জাবির রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে জানালাম, আব্দুল্লাহ কয়েকটি কন্যা সন্তান রেখে ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাদের মতই কুমারী বিবাহ করা পছন্দ করিনি। তাই আমি বয়স্কা মহিলা বিবাহ করেছি, যাতে সে তাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন। “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়:নাফাকাত, পরিচ্ছেদ: আওনুল মার‘আতি জ্রাযিহা ফী ওয়ালাদিহি, প্রাগুক্ত, খ.৫, পৃ. ২০৫৩, হাদীস নং-৫০৫২”।
ইসলামী আইনে বিধবাদের মর্যাদা : ইসলাম বিধবা নারীদের দিয়েছে মর্যাদা, সম্মান ও অধিকার। যদি কোন বিধবা পুনরায় বিবাহ না করে তার ইজ্জত-আবরু রক্ষা করে তার মৃত স্বামীর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়, ইসলাম তাকেও স্বাগত জানায় এবং তার জন্য বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আউফ বিন মালিক আশজায়ী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আমি এবং কষ্ট মেহনতের কারনে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মহিলা কিয়ামতের দিন দুই আঙ্গুলের মত নিকটবর্তী হব। রাসূলুল্লাহ (স.) তর্জনী ও মধ্যমা পাশাপাশি করে দেখালেন। বংশীয় ও কৌলিন্য ও সৌন্দর্যের অধিকারিনী যে বিধবা নারী প্রয়োজন থাকা সত্বেও ইয়াতিম সন্তানের লালন পালনের উদ্দেশ্যে দ্বিতীবার স্বামী গ্রহণ থেকে বিরত রেখেছে। ইমাম আবূ দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: তালাক, পরিচ্ছেদ: ফিমা তাজতানিবুহুল মুতাদ্দাতি ফি ইদ্দতিহ, প্রাগুক্ত, খ.৪,পৃ. ৫০২, হাদীস নং-৫১৫১”। এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, আমিই ঐ ব্যক্তি যার জন্য সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তোমার কি হল? তুমি কে? তখন সে বলবে আমি ঐ মহিলা যে স্বীয় ইয়াতিম বাচ্চার লালন-পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছি (বিবাহ করা থেকে)। “হাফিজ ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ বিন আত-তামীমী আবি ইয়ালা, মুসনাদে আবি ইয়ালা, অধ্যায়: তালাক, পরিচ্ছেদ:ফিমা তাজতানিবুহুল মুতাদ্দাতি ফি ইদ্দতিহ, বৈরুত: দারুল মামুন, খ.১৩, পৃ.৫”।
অপর এক হাদীসে বিধবা ও ইয়াতিমদের যারা সাহায্য সহযোগিতা করে, তাদের কে মুজাহিদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে সালাতে দন্ডায়মান ও দিনে সিয়াম পালনকারীর মত। “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: নাফাকাত, পরিচ্ছেদ: ফাদলিন নাফকিাতি আলা আহলি, প্রাগুক্ত, খ.৫,পৃ.২০৪৭, হাদীস নং- ৫০৩৮”।
ইসলামী আইনে বিধবাদের অধিকার : বৈর্ধব্য হচ্ছে জীবনের অনাকাক্সিক্ষত একটি পরিণতি। এই পরিণতি অত্যন্ত দুঃখের। মানব জীবনের এই অবস্থাতে সে অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ নারীর জীবন যেখানে পুরুষের উপর নির্ভরশীল, সেখানে বিধবাবস্থা নারীর জীবনে দূর্যোগ নিয়ে আসে। “গাজী শামসুর রহমান, মানবাধিকার ভাষ্য, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৯৪ পৃ.৫২০”। ইসলাম পূর্ব আরবে বিধবাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হত। কোন নারী বিধবা হলে তাকে তার স্বামীর সম্পত্তি থেকে অংশ দেয়া হত না; বরং তাকেই সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করে তা উত্তরাধিকারীরা তার সম্পত্তি ও তাকে ভোগ করত। “আল-কুরআন, ৪:১৯”। তাকে নির্জন ঘরে এক বছর যাবত আবদ্ধ করে রাখা হত এবং বছর শেষে পশু-পাখির বিষ্ঠা নিক্ষেপের মাধ্যমে বের হয়ে আসতে হত। “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: ত্বলাক, পরিচ্ছেদ: তুহিদ্দুল মুতাওয়াফ্ফা আনহা আরবাআতা আমহুরি ওয়াশারা, প্রাগুক্ত, খ.৫,পৃ.২০৪২, হাদীস নং-৫০৪২”। ইসলাম বিধবাদের এই করুন অবস্থা থেকে মুক্ত করে তাদের দিয়েছে সম্মান ও অধিকার।
ভরণ-পোষণের অধিকার : ইসলাম বিধবাদের ভরণ-পোষণের অধিকার দিয়েছে। বিধবা নারী তার স্বামীর সম্পত্তি থেকে ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকার রাখে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘‘আর যখন তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে তখন স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করা যাবে। “আল-কুরআন, ২:৪২০”। ‘‘আর যদি বিধবা নারীর নিজের ও সন্তানের ভর-পোষণের কোন অবলম্বন না থাকে, তাহলে রাষ্ট্র তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবে। রাষ্ট্র তাদের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের অভাব অনটন দূর করবে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, আসলাম (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর সঙ্গে বাজারে বের হলাম। সেখানে একজন যুবতি মহিলা তার সাথে সাক্ষাত করে বলল, হে আমিরুল মু‘মিনীন, আমার স্বামী ছোট একটা বাচ্চা রেখে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহর কসম, তাদের আহারের জন্য পাকানোর মত কোন বকরীর খুরাও নেই এবং নেই কোন ফসলের ব্যবস্থা ও দুধেল উঠ, বকরী। ভীষণ অভাবে তারা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আমার আশংঙ্কা হচ্ছে। অথচ আমি হলাম খুফাফ ইবনু আয়মা গিফারীর কন্যা। আমার পিতা নবী (স.) এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলে। এ কথা শুনে উমর (রা.) তাঁকে অতিক্রম না করে পার্শ্বে দাঁড়ালেন। এরপর বললেন, তোমার গোত্রকে ধন্যবাদ। তারা তো আমার খুবই নিকটের মানুষ। এরপর তিনি বাড়ীতে এসে আস্তেবলে বাঁধা উঠের থেকে একটি মোটা তাজা উঠ এনে দুই বস্তা খাদ্য এবং এর মধ্যে কিছু নগদ অর্থ ও বস্ত্র রেখে এ গুলো উক্ত উঠের পিঠে উঠিয়ে দিয়ে মহিলার হাতে এ লাগাম দিয়ে বললেন, তুমি এটি টেনে নিয়ে যাও। এগুলো শেষ হওয়ার পূর্বেই হয়ত আল্লাহ তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি তাকে খুব বেশী দিলেন। উমর (রা.) বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। আল্লাহর কসম, আমি দেখেছি এ মহিলার আব্বা ও ভাই র্দীঘদিন পর্যন্ত একটি দূর্গ অবরোধ করে রেখেছিলেন এবং পরে তাও জয় ও করেছিলেন। এরপর ঐ দূর্গ থেকে অর্জিত তাদেড়র অংশ থেকে আমরাও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের দাবি করি (এবং কিছু অংশ আমরা নিজেরা গ্রহণ করি এবং কিছু অংশ তাদেরকে দেই।) “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: আল-মাগযী, পরিচ্চেদ: গাযওয়াতুল হুদাযবিয়্যাহ, প্রাগুক্ত, খ.৪, পৃ.২৫২৭, হাদীস নং-৩৯২৮”।
ইজ্জত-আবরু নিয়ে জীবন-যাপনের অধিকার : ইসলাম বিধবা নারীকে ইজ্জত-আবরু নিয়ে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে স্বাভাবিকভাবে সে অসহায় বোধ করেও নিরাপত্তাহীন দিন কাটায়। এ সুযোকে অনেকেই তাদেরকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, তাদেরকে বিয়ের প্রলোভন দেখায় ও অশোভনীয় আচরণ করে থাকে। ইসলাম এহেন আচরণ করতে নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘‘আর যদি তোমরা আকারে-ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে কোন আকাক্সক্ষা লুকিয়ে রাখ, তবে তাতে ও কোন পাপ নেই, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীর কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছে কর না। আর এ কথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্যশীল। “আল-কুরআন, ২:২৩৫”। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন: যদি কোন ব্যক্তি ইদ্দত পালনকারী কোন মহিলাকে বলে যে, আমার বিবাহ করার ইচ্ছা আছে। আমি কোন সতী মহিলাকে পেতে ইচ্ছা পোষণ করি। কাসিম (র.) বলেন, এই আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যেন কোন ব্যক্তি বলল, তুমি আমার কাছে খুবই সম্মানিত এবং আমি তোমাকে পছন্দ করি। আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণ বর্ষণ করুন। অথবা এই ধরনের উক্তি। আতা র. বলেন, বিবাহের ইচ্ছা ইশারায় ব্যক্ত করা উচিত, খোলাখুলি এই ধরনের কোন কথা বলা ঠিক নয়। কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারে যে, আমার এ সকল গুনের প্রয়েজন আছে। আর আপনার জন্য সুখবর, সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর জন্য আপনি পুনঃবিবাহর উপযুক্ত। সে মহিলা ও বলতে পারে, আপনি যা বলেছেন, তা আমি শুনেছি কিন্তু এর বেশি ওয়াদা করা ঠিক নয়। তার অভিভাবকদের ও অজ্ঞাতে কোন প্রকার ওয়াদা দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু যদি কেউ ইদ্দতের মাঝে কাউকে বিবাহের কোন প্রকার ওয়াদা করে এবং ইদ্দত শেষে সে ব্যক্তি যদি তাকে বিবাহ করে তবে সেই বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হবে না। “ ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: নিকাহ, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বাণী: ওয়অলা জুনাহা আলাইকুম ফিমা, প্রাগুক্ত, খ.৫,পৃ.১৯৬৮”। ইসলাম বিধবাদের সম্ভ্রমের নিরাপত্তা প্রদান করেছে। জাহিলী যুগের ন্যায় পিতার মৃত্যুর পর তার পুত্র কর্তৃক বিধবা স্ত্রীদের বিবাহ নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমার মামা আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। (রাবী হুশাইম তার বর্ণিত রিওয়ায়েতে বারা ইবনু আযিব (রা.) এর মামার নাম হারিছ ইবনু আমর উল্লেখ করেছেন।) রাসূলুল্লাহ (স.) তার জন্য একটি ঝাগুা তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ (স.) আমাকে এক ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছেন, যে তার পিতার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তাকে হত্যা করি। “ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, তাহকীক: মুহাম্মদ ফুয়অদ আব্দুল বাকী, অধ্যায়: হদ্দ, পরিচ্ছেদ: মান তাযাওয়য়াজা ইমরাআতা আবী হি মিম বা‘দ, বৈরুত: দারুল ফিকর খ.২,পৃ.৮৬৯”। (অসমাপ্ত)