কানাইঘাটে গোষ্ঠি প্রথার দ্বন্দ্বের জেরে হামলায় একজন গুরুতর আহত, এলাকায় উত্তেজনা

5

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের আগতালুক গ্রামে গোষ্ঠি প্রথার দ্বন্দ্বের জের ধরে এবার মামলার বাদীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে এক পক্ষের লোকজন। এ ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার রাত ৮ টার দিকে স্থানীয় সীমার বাজারের পশ্চিম পাশে। হামলাকরীরা এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে আগতালুক গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর পুত্র হেলাল আহমদ (৪০) কে। এ সময় হামলাকারীদের হাতে এলাকার আরো ৩ জন আহত হন। এ ঘটনায় এলাকায় ২টি গোষ্ঠির লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার ভয়ে অনেকে বাড়ী থেকে বের হচ্ছেন না। থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম শনিবার রাতে সীমার বাজার এলাকা পরিদর্শন করে হামলাকারীদের আটক করতে চেষ্টা করলেও কাউকে পুলিশ আটক করতে পারেনি।
সরেজমিনে জানা যায়, গোষ্ঠি প্রথার জের ধরে এক সময় আগতালুক গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদ গোষ্ঠির সাথে একই গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর পুত্র কামাল উদ্দিন গোষ্ঠির মধ্যে সংঘাত, মারামারি ও মামলা মোকাদ্দমার মতো বহু ঘটনা ঘটলে ২০১৮ সালে বৃহত্তর গাছবাড়ী এলাকার মুরব্বীয়ানরা উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন। স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ মে কামাল উদ্দিন গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে হারুন রশিদ গোষ্ঠির লোকজন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। জখমের পর প্রথমে কামাল উদ্দিনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কয়েকদিন সেখানে চিকিৎসা প্রদানের পর বর্তমানে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে র্ভতি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় আহত কামাল উদ্দিনের ভাই হেলাল আহমদ বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় সে সময় হারুনুর রশিদ গোষ্ঠির ১৫জন কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় একজন বর্তমানে জেল হাজতে ও মামলার আসামী হারুন রশিদ সহ ২জন জামিনে ও অন্যান্য আসামীরা পলাতক রয়েছে বলে হেলাল আহমদের স্বজনরা জানিয়েছেন। মামলার পর থেকে হারুন রশিদের গোষ্ঠির লোকজনের ভয়ে মামলার বাদী হেলাল আহমদ ও তার গোষ্ঠির অনেক লোকজন হাটবাজার সহ এলাকায় চলাফেরা বন্ধ করে দেন। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে মামলার বাদী হেলাল আহমদ সহ তার বাড়ীর কিছু লোকজনকে নিয়ে স্থানীয় গাছবাড়ী বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে সীমার বাজারের পশ্চিম পাশে পাকা রাস্তায় আসা মাত্র হারুন রশিদ গোষ্ঠির অর্ধশতাদিক লোকজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র সস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে হেলাল আহমদের উপর হামলা করে। হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে হেলাল আহমদ ক্ষেতের মাঠ দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলে হামলাকারীরা একপর্যায়ে তাকে ধরে শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং এলোপাতাড়ি ভাবে পিটিয়ে মৃত ভেবে রেখে চলে যায়। এ সময় হামলাকারীদের হাতে আহত হন হেলাল আহমদের চাচাতো ভাই লুকমান আহমদ সহ আব্দুল্লাহ ও নজরুল ইসলাম @ নজু নামে ৩ জন। বর্তমানে হেলাল আহমদ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতের পক্ষের গোষ্ঠির লোকজনের অভিযোগ পূর্বের মামলার জামিনে থাকা আসামী হারুন রশিদের নেতৃত্বে তার গোষ্ঠির লোকজন ধারালো অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে হেলাল আহমদের উপর সস্ত্র হামলা করে। তাদরে গোষ্ঠি ছোট থাকার কারণে প্রতিপক্ষের লোকজনের ভয়ে তারা বাড়ী থেকে বের হতে পারছেন না। এলাকায় দা ও লাঠি সোটা নিয়ে হারুন রশিদ গোষ্ঠির লোকজন সবসময় চলাফেরা করে থাকে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলেছেন, আগতালুক গ্রামের ২টি গোষ্ঠির মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চলছে। যার কারনে স্থানীয় লোকজন এক ধরনের আতংকে রয়েছেন ভয়ে সীমার বাজারে অনেকে আসছেন না। এসব অস্ত্র উদ্ধারের জন্য থানা পুলিশের প্রতি জোর দাবী জানান এলাকাবাসী। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে ২টি গোষ্ঠির লোকজনের বিরোধ নিরসনে জন্য দ্রুত থানা পুলিশ সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। হেলাল আহমদের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং থানায় গতকাল রবিবার তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক এবং এলাকায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে তৎপর রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।