আফগানিস্তানে শান্তিরক্ষা জরুরী

2

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে নৃশংসতম জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে তালেবানের বিজয়ের পর হাজার হাজার মানুষ দেশত্যাগ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনা সদস্যরা কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে বিমানে সেসব মানুষকে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছিল। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে দুটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রাথমিক খবরে জানা যায়, বিস্ফোরণে শতাধিক নিহত এবং দেড় শ মানুষ আহত হয়েছেন। কোনো কোনো সূত্রে আহতের সংখ্যা কয়েক শ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছে, হামলায় তাদের ১৩ জন সেনা নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। তালেবান কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যম খবর দিয়েছে এই হামলায় তাদের আরো বেশি সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধসহ দেশত্যাগে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান বা আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, আইএস শিগগিরই আরো হামলা চালাতে পারে।
কয়েক দিন ধরেই আইএসের এমন হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের কাবুল বিমানবন্দরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। তাদের সেই আশঙ্কাই সত্য হলো। পাশাপাশি এই হামলার মধ্য দিয়ে তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তারও একটি ধারণা পাওয়া গেল। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, আফগানিস্তানে আইএস ও আল-কায়েদার বড় ধরনের উপস্থিতি রয়েছে। এত দিন তারা হাক্কানি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে এক ধরনের লিয়াজোঁ রক্ষা করেই চলেছে। সেই লিয়াজোঁ এখন আর টিকবে না। অচিরেই রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়ে যাবে। শুধু আফগানিস্তান নয়, আশপাশের অনেক দেশেই জঙ্গিবাদের আগুন ছড়িয়ে যাবে। তালেবান জোট চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা কোনো দেশে জঙ্গিবাদকে উসকানি দেবে না। কিন্তু আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের লক্ষ্যই হলো, সারা বিশ্বে ‘ইসলামী বিপ্লব’ সংঘটিত করা। এ ক্ষেত্রে তালেবানের সঙ্গে তাদের সংঘাত হবেই। বলা হয়, তালেবানের এই বিজয়ে পাকিস্তানের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। পাকিস্তান সরকার এরই মধ্যে টিটিপিসহ কয়েকটি গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। তা করতে গেলে এই গোষ্ঠীগুলোও আফগানিস্তানে সন্ত্রাস চালাবে এবং আইএস ও আল-কায়েদাকে মদদ জোগাবে। তেমন পরিস্থিতিতে হাক্কানি নেটওয়ার্কের ভূমিকা কী হবে তা নিয়েও অনেকের সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এখন কিছুটা স্তিমিত থাকলেও অনেকেই মনে করেন, যেকোনো সময় তা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে যে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে, তার কিছু আঁচ বাংলাদেশকেও স্পর্শ করতে পারে। তাই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আশা করি, আফগানিস্তানে শান্তি রক্ষায় বিশ্বশক্তি জরুরি ভূমিকা রাখবে।