করোনায় বিপন্ন প্রসূতি

8

করোনার বিপন্ন স্বাস্থ্যসেবায় গর্ভবতী মায়েদের অবস্থা আরও শোচনীয়। গত দেড় বছর ধরে দুঃসহ ক্রান্তিকাল দেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। কোন আনন্দই ভোগ করতে পারছে না মাানুষ। প্রসূতি মায়েরা যে অসহনীয় যাত্রাপথ পার করছে তার শেষ গন্তব্যও আশাহতের বেদনায় আবর্তিত। নতুন প্রজন্মকে পৃথিবীর আলো দেখানো সব মায়ের জন্য এক শুভবার্তা। জাতির জন্যও এক অভাবনীয় সম্পদ। করোনার মহাদুর্যোগে সেখানেও তৈরি করছে এক অনাবশ্যক জটিলতা। টেলি মেডিসিন কিংবা অনলাইন সেবা প্রসূতিদের ক্ষেত্রে সেভাবে কার্যকর নয়। কোন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গর্ভবতী মায়ের সরাসরি শারীরিক পরিচর্যা করে সন্তান ও জন্মদাত্রীর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন যা অনলাইনে সম্ভবও নয়। বর্তমানে করোনার কারণে যেমন হাসপাতালগুলো নিরাপদ নয় পাশাপাশি চিকিৎসকের চেম্বারও স্বাস্থ্যসেবার অনুকূল থাকে না। সেখানেই ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত বিপত্তি। জঠরে তিল তিল করে বড় হওয়া ভ্রুণটি মায়ের আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের দরজায় আসতে যখন অপেক্ষমাণ তেমন গুরুত্বপূর্ণ সময়টা জটিল আবর্তে পড়ে যাওয়ার চিত্র মাঝে মধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে আসে। গর্ভে লালন করা সন্তানটিকে নিয়ে দুশ্চিন্তারও কোন শেষ থাকে না।
প্রথমত মা যদি করোনায় সংক্রমিত হন তা হলে ভেতরের শিশুটি কতখানি নিরাপদ এনিয়ে শঙ্কা থাকে। তার ওপর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দুর্ভোগ। শারীরিক বিপন্নতার উপসর্গগুলো অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও নির্দেশনা আসে। পরীক্ষা করাতে হাসপাতাল কিংবা ডায়গানস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। সেখানেও ঝুঁকি থেকে যায়। রিপোর্টের পরও মা ও সন্তানের অবস্থা জানতে শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যথাযথ চিকিৎসার ঘাটতি মা ও সন্তানের জীবন বিপন্ন হতে পারে। প্রসূতি মায়ের রক্তক্ষরণ থেকে শুরু করে আরও অনেক জটিলতা তৈরি হলে জঠরে থাকা কোমল শিশুটিই পড়ে সবচেয়ে বিপাকে। অনেক ক্ষেত্রে তার পৃথিবীর আলোও দেখা হয় না। জন্মের পর ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে শারীরিক অক্ষমতার শিকার হওয়াও ভয়াবহ বিপর্যয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, সরকারী-বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো আগের মতো প্রসূতিসেবা দিতে পারছে না। ফলে গত এক বছরে প্রসূতি মায়েরা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে শারীরিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে বিপত্তির মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে গর্ভবতী মায়েরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে পেরেছেন চার ভাগ মাত্র। সঙ্গত কারণে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে ১৭%। এসব নিয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, গত দেড় বছর ধরে করোনার সঙ্গে ক্রমাগত লড়াইয়ে আমরা অনেক কিছুকে ঠিকঠাক পর্যবেক্ষণ করতে হিমশিম খেয়েছি। সতর্ক-সাবধানতার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে আসা অত্যন্ত জরুরী। এর ব্যত্যয় হলে বিপদ ঘটতে সময়ও লাগবে না। আবার প্রসূতি মায়েদের সেবা দিতে গিয়ে অনেক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও মর্মাহত। সুতরাং চরম ছোঁয়াচে রোগটিকে নিরাপদ দূরত্বে সরাতে গেলে প্রতিষেধক টিকার বিকল্প অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশ বর্তমানে টিকা দেয়ার কর্মসূচী জোরদার করেছে। পরিস্থিতির অনিবার্য দাবি এর আরও সম্প্রসারণ।