অনিকের গ্রাম দেখা

12

মোঃ রতন ইসলাম :

অনিক ঢাকায় থাকে ঢাকায়-ই তাঁর জন্ম।
ক্লাস ফাইভে পড়ে অনিক। কখনো তাঁর ঢাকার বাইরে যাওয়া হয়নি। অনিকদের ঢাকায় নিজস্ব বাড়ি। অনিকের এক ফুফু ছিল যে কিনা গ্রামে থাকতো। একদিন অনিকের ফুফা অনিকদের বাসায় আসলো। অনিকের ফুফাতো বোনের বিয়ের দাওয়াত দিতে। অনিকের বাবাও কথা দিল আমরা যথা সময়ে পৌঁছে যাব ইনশাআল্লাহ। সে বিয়ের সূত্রে অনিকের প্রথমবারের মতো গ্রামে যাওয়া হচ্ছে। অনিক মা-বাবার সাথে রওনা হলো গ্রামে বিয়ে খাওয়ার উদ্দেশ্যে।
অনিকদের গাড়ি যখন গ্রামের স্টেশনে গিয়ে থামলো অনিকরা নেমে পড়লো। এখন বাড়ি পর্যন্ত টমটম গাড়িতে যেতে হবে। এর আগে অনিকের টমটমে আর ওঠা হয়নি। অনিকের খুব আনন্দ হচ্ছে টমটমে উঠে। টমটম যখন যাচ্ছিল দুপাশে তার সবুজধানের ক্ষেত মাঝখানে তার কাঁচারাস্তা। অনিকের যতদূর চোখ যায় দেখে সবুজ আর সমুজ গাছে-গাছে পাখিদের ঝাঁক বসে ব্যস্ত কিচিরমিচির ডাকে। ফুরফুর করে বাতাস কানের কাছ দিয়ে ঘুরঘুর করছে। অনিকের যে কী ভালো লাগতেছে! আর ভাবতেছে গ্রাম এতো সুন্দর! সেতো রীতিমত অবাক!যাইহোক টমটম বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো অনিকের ফুফু দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো অনিককে আর বলল বাবা তুমি আসছো!অনিকদের ঘরে নিয়ে গেল। বাড়িতে বিয়ের বেশ আয়োজন চলছে। হলুদের দিন অনিক দেখতে পেল মহিলারা হলুদ বাটছে আর কজন মহিলা একসাথে গীত গাচ্ছে।হলুদ হলো দু’দিন পর বরযাত্রী এলো খুবই আনন্দ হলো বিয়েতে। অনিক ঢাকায় অনেক বিয়ে দেখেছে কিন্তু এমনটি দেখেনি।
যাইহোক বিয়ে শেষ হলো দু’দিন বাদে অনিকরা ঢাকা ফিরবে। ফেরার একদিন আগে অনিকের ফুফাতো ভাই অনিককে সাইকেলে করে বের হলো গ্রাম দেখাতে। অনিকরা পুকুরের পাড় দিয়ে যাচ্ছিল, অনিক দেখলো কিছু ছেলে পুকুরে সাঁতার কাটতেছে। অনিক অপলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। অনিক দেখলো মাঠে গরু-ছাগল ঘাস খাচ্ছে,আবার মাঝেমধ্যে গরু হাম্বা হাম্বা, ছাগল ম্যা ম্যা ডাকছে। ছেলে-মেয়েরা সবুজ ঘাসের ওপর খালি পায়ে খেলা করছে। হরেক রকম গাছ গাছে-গাছে ফল ধরেছে ফুল ধরেছে। প্রজাপতি-ফড়িং উড়ছে। সব মিলিয়ে অনিকের ভেতরে এক নান্দনিক অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। অনিক গ্রামকে যতই দেখছে ততই তাঁর দেখার আগ্রহ বাড়ছে। অনেক ঘোরা শেষে অনিকরা বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরে মায়ের মুখে শুনল,বাবা তোর জামাকাপড় গুছিয়ে নে আমরা কাল ঢাকা ফিরছি।
অনিকের যেন কথাটা একদমই পছন্দ হলো না। ওর মনেহলো আর কদিন থাকলে কত্ত মজা হতো। অনিক গ্রামের সৌন্দর্যের মায়ায় আটকা পড়েছে। ওর গ্রাম ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছে না।তবুও কি করার গালদুটো ফুলিয়ে মুখখানা ভার করে মা-বাবার সাথে ঢাকায় ফিরতে হলো।