সিলেটে দফায় দফায় ভূমিকম্প, জনমনে আতঙ্ক, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সিসিকের অভিযান আজ

12

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
দফায় দফায় ভূমিকম্পনের ফলে সারা সিলেট ক্ষেপে উঠেছে। প্রায় ৫ বার এ ভূমিকম্পনের ফলে সিলেটের জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে দুপুরের ভূমিকম্পনটি ছিল বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে ভূমিকম্পনে ঘর, অফিসা, আদালতের ভবন থেকে দৌড়ে বের হয়ে খোলা স্থানে বাহিরের চলে আসেন।
তবে গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেট নগরী বা তার আশপাশ এলাকায় কোন হতাহত অথবা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এই ভূমিকম্পনের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেটের জৈন্তাপুর বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার সকাল ১০ টা ৩৬ মিনিট, ১০টা ৫০, ১১টা ৩০ মিনিট, ১১টা ৩৪ ও বেলা ১টা ৫৮ মিনিটে সিলেটে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের সর্বোচ্চ মাত্রা ৪ দশমিক ১ মাত্রা ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোন ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে।
এদিকে, গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভূমিকম্পের উপর করণীয় এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এধরনের ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ার কারণে আশংকাজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার সাথে এই জরুরী সভা করে সিলেট সিটি করপোরেশন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ১ দিনে অল্প সময়ে অন্তত ৫ বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের আশংকা রয়েছে। সে অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজস্ব একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সিলেট মহানগরে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সকল বিভাগ, শাখা ও দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা। খোলা হয় একটি হটলাইন। যার নম্বর ০১৯১১২৪৯৬৯৯। গতকাল শনিবার বিকেল ৪ টায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ জরুরী সভা থেকে নগরবাসীকে আতংকিত না হয়ে সচেতন ও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জরুরী বৈঠক শেষে সিলেট সিটি কপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটে গতকাল কিছুক্ষণ পরপর ভূমিকম্প হয়েছে। সেটিকে আমরা এলামি হিসেবে নিয়েছি। এছাড়া তিনি বলেন, আমরা একটি টিম গঠন করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ নিয়ে ওই টিম আজ রবিবার সকাল থেকে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যেগুলো রিমোভ করা যায় সেগুলো করা হবে। এ সময় মেয়র আরো বলেন, যেসব জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকে না সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। অভিযানে মেয়র আরিফ নিজেও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান।
ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম বলেছেন, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৫ বার কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ৪টির মধ্যে রিখটার স্কেলে কম্পনের সর্বোচ্চ মাত্রা ৪ দশমিক ১। এছাড়া ৪, ৩ ও ২ দশমিক ৮ মাত্রাও রয়েছে। এদিকে কোন কোনটি এতো মৃদু যে সব স্টেশনে মাত্রা মাপাও যায়নি। মুমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেটে এমন আর কখনো হয়নি যদিও সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে ৩টি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে। সিলেটের জৈন্তায় গতকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে সবগুলোই ছোট ধরণের ভূমিকম্প। তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পের প্রিশক ও আফটারশক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তারপর ছোট ছোট কম্পন হয়। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা যীশু তালুকদার জানান, সিলেটে এমন কম্পনে প্রাথমিকভাবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আমাদের কাছে আসেনি।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে ৪ বার ভূমিকম্প হয়েছে। অনেকেই ৫বার দাবি করলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৪ বার ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল সিলেট। এখানে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। সর্বশেষ বেলা ২টার দিকে আরেক দফা ভূমিকম্প হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শবিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে সিলেট নগরীতে ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এরমাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় অর্থাৎ ১০টা ৫০ মিনিটে ৪.১ মাত্রায় আবারো হয় ভূমিকম্প। দ্বিতীয় দফার ভূমিকম্পে নগরীর মানুষ অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এর কিছু সময় যেতে না যেতেই সকাল সাড়ে ১১টায় ২.৮ মাত্রায় আরেকদফা ভূমিকম্প হয় সিলেট নগরী ও আশেপাশে। আর সর্বশেষ বেলা ১টা ৫৮ মিনিটে রিখটার স্কেল ৪ মাত্রায় ভূমিকম্প হয় নগরীতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এমন ভুমিকম্পে সিলেট নগরীর মানুষ বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
নগরীর কালিঘাটের এক বাসিন্দা জানান, দুপুরের ভূমিকম্পনের সময় ভবন থেকে রাস্তায় বের হয়ে খোলাস্থানে দৌড়ে চলে আসি। এখন তার খুব ভয় লাগছে।
ভূমিকম্প ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানিয়েছেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। আগামী ৩/৪ দিন সিলেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।