কাগজের গোলাপ

30

মাহতাব উদ্দিন :

ফাওজিয়ার আজ মনটা ভালো নয়।স্কুলের বাগান থেকে আনা গোলাপ দু’টি ঝিমিয়ে পড়েছে হঠাৎ। ডালাসমেত গোলাপগুলো পানিভর্তি একটি বোতলে রেখে দিয়েছিল সে। মিষ্টি-গন্ধে ঘর উদাস থাকত সবসময়। মাত্র একসপ্তাহ যেতেই ফুলগুলোর সৌন্দর্য এবং গন্ধ চলে যাওয়ায় ফাওজিয়া মন খারাপ করে খাবারও কমিয়ে দিয়েছে। বাড়ির পাশেই তার প্রতিষ্ঠান, নাম প্রাইম স্টার একাডেমি। উপজেলার মধ্যে অন্যতম একটি ভালো প্রতিষ্ঠান এটি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এ প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ রয়েছে। স্কুলের প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর একটি বাগান রয়েছে। প্রায় সারাবছরই এতে ফুল থাকে। তার বাবা অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। সে তার বাবার সাথে প্রায়শই বাগান পরিচর্যা করতে স্কুলে যায় এবং প্রয়োজনে নানান জাতের আকর্ষণীয় ফুল সংগ্রহ করে থাকে।
দীর্ঘদিন ফুল তাজা না থাকায় তার মাথায় একটি আইডিয়া আসে। সে কাগজ দিয়ে গোলাপ বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কাগজ দিয়ে গোলাপ কীভাবে বানানো যায় এ ব্যাপারে তার বড়ো বোন ফারিহার সাহায্য চায়। ফারিহা নেট থেকে ভিডিও নামিয়ে কাগজের গোলাপ বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়। সে তার ভাইয়া সাকির মাধ্যমে বাজার থেকে কাগজের গোলাপ বানানোর প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী যেমন- লাল ও সবুজ রঙের আর্ট পেপার, কেঁচি, আঠা আগেই কিনে আনে। ভিডিও দেখে দেখে তারা প্রথমে লাল আর্ট পেপারে প্যাঁচানো দাগ কাটে। দাগমতো গোলগোল করে পেঁচিয়ে শেষ প্রান্ত আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়। সবুজ কাগজটি পাতার মতো কেটে নিচে বসিয়ে দেয়। ফাওজিয়ার আপু, ফারিহা গোল গুচ্ছ তৈরি করে এবং লাভ আকৃতির একটি গোলাপ বানায়। এভাবে সবুজ আর্ট পেপার কেটে সবুজ রঙের একটি গোলাপও ফারিহা বানায়। সাকি আনন্দচিত্তে বলতে থাকে, ” আপু, এবার আমিও বানাতে পারব, কাগজের গোলাপ।” ফাওজিয়া বলে, ” আপু, আমিও বানাতে পারব ।” তারপর তিন ভাই-বোন মিলে বেশ কয়েকটি গোলাপ বানায়, কাগজ দিয়ে। ফাওজিয়া ফুলগুলো ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখে। ঘ্রাণ না পেলেও মনের মতো করে গোলাপ বানিয়ে দীর্ঘদিন ঘরে সাজিয়ে রাখতে পেরে সে বেজায় খুশি। তার মন ভালো হয়ে যায়। সে সাকি এবং ফারিহাকে বলে, ” তোমাদের ধন্যবাদ, তোমাদের সহযোগিতায় আজ পেলাম, অনেকগুলো কাগজের গোলাপ। ”