মামুনুল হকের ৩ বিয়ের দুটিই চুক্তিভিত্তিক

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রিমান্ডে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক নানা বিষয়ে মুখ খুলছেন। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি।
প্রথম বিয়ে ছাড়া দুই জান্নাতকেই চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করেছিলেন মামুনুল হক। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতেই দুই ডিভোর্সি নারীকে বিয়ে করেছিলেন বলে তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এমনকি, মামুনুল প্রথম বিয়ে ছাড়া বাকি দুই বিয়ের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। সাতদিনের রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক জানান, রিসোর্টকাণ্ডে আগে এসব বিয়ের কথা স্বীকার করলে প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ঝামেলা করতেন বলে ধারণা। এ জন্য তিনি বিষয়টি প্রথমে গোপন করেছিলেন। ব্যস্ততার কারণে জান্নাত আরার সঙ্গে তার ৯ মাস ধরে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। জান্নাত তাকে সময় দেয়ার জন্য বারবার বলছিলেন। তাই জান্নাতকে নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টের নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, দুই বছর ধরে জান্নাত আরার ভরণপোষণ ছাড়াও ব্যবসা করার জন্য মূলধন দিয়েছেন এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন মামুুনুল হক।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় জান্নাত অর্থাৎ জান্নাতুল ফেরদৌসীর সঙ্গে তার স্বামী সাইদুর রহমানের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি (ডিভোর্স) হয়ে যাওয়ার পর তারও দায়িত্ব নেন তিনি। বিয়ে ছাড়াও তার চাকরির ব্যবস্থাও করে দেন মামুনুল হক।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের পতনের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখেছিলেন মামুনুল হক। এজন্য তিনি হেফাজত নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তার মতে, অন্য নেতাদের দিয়ে এই বিপ্লব সম্ভব নয়, তাই তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলনের নামে সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। মামুনুল মনে করতেন, বর্তমান সরকারের পতন হলে কাউকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে হলে হেফাজতের সমর্থন লাগবে। আর এই সরকার পতনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হেফাজতে ইসলামের মধ্যে অন্যতম উগ্রপন্থী নেতা মামুনুল হক। তিনি যেকোনো মূল্যে এই সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এই কারণে আন্দোলনের নামে যেকোনো কর্মসূচিতে সহিংসতার উসকানি দিতেন তিনি।
সবশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল হেফাজতে ইসলামের। এমন হীন উদ্দেশ্যে কওমি মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন মামুনুল হক। ভেতরে-বাইরে তিনি দ্বৈত চরিত্রের অধিকারীÍ এটা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কথিত বিয়ের কাহিনী ফাঁস হওয়ার পর থেকে ঘরে-বাইরে চাপে আছেন তিনি। হেফাজতের ভেতরেও একটি অংশ তার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ। রিসোর্টকাণ্ডের পর প্রথম স্ত্রীসহ নিজের পরিবারের সদস্যদের কারও কারও কাছে তিনি বিরাগভাজন হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে বাসায়ও যাননি তিনি।
অপর একজন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। হেফাজতের অর্থনৈতিক প্রবাহ কোথা থেকে আসে এ প্রশ্নটি তিনি কৌশলে এড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে দেশব্যাপী বেপরোয়া তাণ্ডবের নেপথ্যে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের যে উসকানি ছিল, মামুনুল হক তাদের অন্যতম বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রথমে তাকে তেজগাঁও ডিভিশনের ডিসি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় তেজগাঁও থানায় এরপর রাতে এখান থেকে নেয়া মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে।