গোয়াইনঘাটে বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

5

গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
বোরো ধানের বাম্পার ফলনে এবার হাসি ফুটেছে গোয়াইনঘাট উপজেলার কৃষকের মুখে। উপজেলার ১০ ইউনিয়নে এখন সবুজের সমারোহ। দিগন্তজুড়ে সবুজ আর সবুজ। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশায় এবার কৃষকরা বুক বেঁধেছে। গেল বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম কিছুটা বাড়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন তারা।
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এখন সবুজ ধানের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ ধানের ক্ষেত। উপজেলার প্রধান কৃষিপণ্য ধান। তাই এ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। দিগন্ত জুড়ে নজর কাড়ছে বোরো ফসলের ক্ষেত। বাতাসের তালে তালে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের পাতা। কৃষকরা ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা সার প্রয়োগ করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারের লক্ষমাত্রা অতীতকে ছাড়িয়ে যাবে। মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের অধিক ফলন উৎপাদনের লক্ষে নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে শুষ্ক মৌসুমেও থেমে নেই ধানের চাষ। কৃষকদের একগাদা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম আর বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতির কথা চিন্তা করে ধান চাষে মেতেছেন উপজেলার অনেকেই।
সালুটিকর গোয়াইনঘাট রোডের কূল ঘেঁষে নন্দিরগাঁও, তোয়াকুল, রুস্তমপুর, লেঙ্গুরা, আলীরগাঁওসহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে দেখা গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে নলকূপের মাধ্যমে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার ফলস্বরূপ এই শুকনো মৌসুমেও দেখা যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধানের চাষ। যেখানে ২৮, ২৯ হাইব্রিডসহ নানা জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কীটনাশক। এসব কীটনাশক ধান ও মাটির জন্য ক্ষতিকারক নয় বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই ধান ক্ষেত শুধু আমাদের জন্য নয় বরং সারাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তারা আরো বলেন, আমরা সবাই যদি শুষ্ক মৌসুমে ধানের চাষ করি তাহলে আমাদের দেশে আর কোনো খাদ্য ঘাটতি থাকবে না। যারা কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল নয় তারাও অতি সস্তায় চাল কিনে খেতে পারবে। করোনার মত দুর্যোগেও সার বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় ভালো ফলন হয়েছে বলে মনে করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৮ হাজার একশ ২৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৯ হাজার ৭০০ শত ৫০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে।
এ ব্যাপারে আঙ্গারজুর গ্রামের কৃষক মাসুক মিয়া বলেন, ‘অন্যান্য বারের চেয়ে এবার আমরা অনেক বেশি বোরো ধান চাষ করেছি। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।’
উপজেলার জাঙ্গাইল গ্রামের কৃষক জলাল উদ্দীন বলেন, ‘জমিতে সময় মতো পানি দেওয়ায় ধান সবুজ হয়েছে। এবার ঝড় বৃষ্টি না হলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আমরা অনেক উপকৃত হব। বছরের শুরুতে কিছুটা শিলাবৃষ্টি হলেও ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয় কৃষকরা বলেন এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতি নেই তবে সামনে শিলাবৃষ্টি বা ঝড় হলে ফসলের ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছে, করোনার কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানান তারা। আরো বলেন, বিগত বছরগুলোতে ধান চাষ করে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা উৎপাদন খরচই তুলতে পারেননি। এবার শেষবারের মতো বোরো ধান আবাদ করেছেন বলে অনেকেই জানান, ন্যায্যমূল্য না পেলে আর ধান আবাদ করবেন না বলে জানান অনেকে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেখানেই দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী বলেন, ‘অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার উপজেলার কোথাও মাজরা পোকার আক্রমণ এখন পর্যন্ত দেখা দেয়নি। ফলে আমরা আশা করছি, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।’
তিনি আরো বলেন, করোনাকালে সার বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় এবং ধানের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির ফলে উপজেলার কৃষকদের কৃষিতে আগ্রহ বেড়েছে। এবার কৃষি উপযোগী অনুকূল পরিবেশ থাকায় ধানের ফলন আরো ভালো হয়েছে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এবার সার বীজ কীটনাশকে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের নানা প্রণোদনা দিয়ে কৃষিতে বিপুল পরিমাণ সহায়তা প্রদান করেছে।