আহমদ শফীর মৃত্যু ॥ বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন ৩১৩ আলেম

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন ৩১৩ জন আলেম। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে মহিব্বিনে আহমদ শফি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের প্রচার সচিব মাওলানা মুফতি আব্দুস ছাত্তার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। আহমদ শফীর একজন ঘনিষ্ঠ শীর্ষ আলেম কাছে বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসায় আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস লুটতরাজের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফির রুম ভাঙচুর, মাদ্রাসার মুহাদ্দিসদের রুম ভাংচুর ও তাদের শারীরিকভাবে মারধরের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা পুরো কওমি অঙ্গনকে কুলষিত করেছে। জামাত-শিবিরের ক্যাডার ও মানহাজি-চরমপন্থী এ চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। মূলত হাটাহাজারী মাদ্রাসার ক্ষমতা দখল, কওমি অঙ্গনকে দখল, রাজনৈতিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্লাটফরম তৈরি এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শাহ আহমদ শফীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়াই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।’
৩১৩ জন আলেমের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘আজ যখন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পরিবার হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, যখন বিচারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হলো; তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এক শ্রেণির ক্ষমতালোভী ও রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিকে অস্বীকার করে আহমদ শফীর লাশ কবর থেকে তুলতে হবে বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফী ইন্তেকাল করেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন আহমদ শফির শ্যালক মাঈনুদ্দীন। পরে একমাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইকে নির্দেশ নিয়েছেন আদালত। এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ হিসেবে অভিযোগ করেছেন হেফাজতের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিবৃতিতে ৩১৩ আলেম উল্লেখ করেন, ‘গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) হাটহাজারী মাদ্রাসায় জুনাইদ বাবুনগরী তার আপন মামাকে ও হাটহাজারী মাদ্রাসার কিছু নিরহ ওস্তাদদের সঙ্গে নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তার মাধ্যমে তিনি একটি কথাই বারবার তুলে ধরেছেন, তা হলো-আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তবে তদন্ত হলে সমস্যা কোথায়? স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তদন্তের ফলাফলেই তো বেরিয়ে আসবে। তাহলে তিনি কেন মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন এবং প্রত্যাহার করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিচ্ছেন?’
‘এতে করে বোঝা যায়, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। যদি তার দাবি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তো তার উচিত ছিল এ মামলা এবং এর তদন্তকে সাধুবাদ জানানো। তা না করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি-ধামকি দিয়ে এটাই প্রমাণ করলেন যে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু অস্বাভাবিক হয়েছে। হাটহাজারী মাদ্রাসার কোনও ওস্তাদ মামলার অভিযুক্ত না হলেও সংবাদ সম্মেলনে হাটহাজারী মাদ্রাসার ওস্তাদদের উপস্থিত রেখে মূলত নিরহ আলেম ওলামাদের বিতর্কে জড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং পাবলিকের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার পায়তারা করছেন।’Íবিবৃতিতে উল্লেখ করেন আলেমরা।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘৩৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে যে মামলা হয়েছে, তারা সবাই আল্লামা শাহ আহমদ শফীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে তারা আজ বিভিন্ন আলেমদের নামে নিজেদের বিবৃতি দিচ্ছে মিডিয়াতে। যারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাযায় শরিক হয়েছিলেন, তারা সবাই আল্লামা শফীকে হত্যাকাণ্ডের নিশান প্রত্যক্ষ করেছেন এবং হযরতের পরিবার থেকে একাধিকবার বক্তব্য ও সাংবাদিক সম্মেলন করে বিচারের দাবি করা হয়েছে। একজন ভিকটিম হিসেবে হত্যার বিচার দাবি করা তার পরিবারের জন্য আপরাধ? সন্ত্রাসীরা হযরতের পরিবার এবং মাওলানা আনাছ মাদানীকে আজও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তাদের হুমকির ভয়ে তিনি সচরাচর চলাফেরা করতে পারছেন না। আমরা এই পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বিবৃতিতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন-মুফতি ওসমান (ঢাকা), মুফতি নুরুল ইসলাম (ঢাকা), আব্দুল কাদের, মুফতি সাইফুল ইসলাম (ঢাকা), মুফতি খেফায়ত উল্লাহ (ঢাকা), মুস্তাফা কামাল (সিলেট), মুফতি সিরাজুল ইসলাম (চট্টগ্রাম), মুফতি নোমান কাসেমী (নোয়াখালী), মাহমুদুল হাসান জিহাদী (চট্টগ্রাম), রহিম উল্লাহ নোমানী (কুমিল্লা), আব্দুল হক (চাঁদপুর), আব্দুস সাত্তার জিহাদী (ঢাকা), মুজাহেরুল হক (জামালপুর), সাইফুদ্দিন কাসেমী (চট্টগ্রাম), আমিনুল ইসলাম (বাগেরহাট), নাছির উদ্দিন আফেন্দি (পাবনা), মুফতি আহমদ আলী (কুমিল্লা), হাফেজ জাবের আহমদ (নরসিংদী), মুফতি ফয়জুল করিম (সিলেটি), শহিদুল্লাহ (যশোর), ইয়াকুব আহমেদ (কক্সবাজার), মুবিনুল হক, এনামুল হক, সুলাইমান, সাদেক হোসাইন, ইকবাল হোসেন, সাকের হোসেন জালালী, নজরুল ইসলাম রহিমী, আব্দুল ওয়াহাব জাফরী (নওগাঁ), মুফতি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।