আজ নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস

4

তোফাজ্জল হোসেন নবীগঞ্জ থেকে :
আজ ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। নবীগঞ্জের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। সূর্য সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের ওই দিনে নবীগঞ্জ থানা ক্যাম্পের ব্যাংকারে হামলা চালিয়ে পাক সেনাদের হটিয়ে নবীগঞ্জ শহরকে পাকিস্তানী বাহিনীর কাছ থেকে নবীগঞ্জকে শত্র“ মুক্ত করে। ৭১ এর উত্তাল দিন গুলোতে নবীগঞ্জ শত্র“মুক্ত করতে বিভিন্ন সময় নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে পাক ব্যাংকারে আক্রমণ শাণিত করে। আগষ্টে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশ বিধু বাবু ও রইছ উদ্দিন সুবেদারের নেতৃত্বে পৃথক দুটি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে পাক সেনাদের প্রতিরোধের মুুখে মুক্তি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে ২ ডিসেম্বর টেকের হাট ৫ নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার মূর্শেদউজ্জামান রশিদ সহ আরো কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে দিনারপুর থেকে বাউসা ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার ব্যাকারে অভিযান চালিয়ে রাজাকারদের বিতাড়িত করেন। এ অভিযানে এক রাজাকারের মৃত্যু হয়। ওইদিন মুক্তিযোদ্ধা রা তাদের আস্তানা দিনারপুরে ফিরে গিয়ে করঁগাও গ্রামের কবির মিয়া নামে এক সোর্সকে নবীগঞ্জ থানা ক্যাম্পের ব্যাংকারে আক্রমণের স্কেপ ম্যাপ সংগ্রহের জন্য পাঠায়। সে বিশ্বাস ঘাতকরা করে পাক বাহিনীর কাছে তথ্যটি ফাঁস করে দেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোরে টেকের হাট ৫নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার মূর্শেদউজ্জামান রশিদ তার ৩৬ জন সহ যোদ্ধা দের নিয়ে রাজনগর সংলগ্ন নবীগঞ্জ বানিয়াচং সড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে ব্যাংকারে আক্রমণ করেন। গুলি পাল্টা গুলির শব্দে এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে থাকে। দলে সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ধ্রুব সাহসিকতার সাথে নিজের জান বাজি রেখে ব্যাংকারটি ধ্বংস করতে গ্রেনেড হাতে কলিং করে নবীগঞ্জ বানিয়াচং রাস্তার উপর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এক পর্যায়ে পাক বাহিনীর গুলিতে তার মাথা ঝাঝরা হয়ে যায়। তার নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকে। রাজনগর গ্রামের কিছু সংখ্যক যুবক পরিচয়হীন লাশটিকে নিয়ে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করেন। পাক বাহিনীর গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা ফটিক মিয়া, আহাদ মিয়া ও ছাবু মিয়া আহত হয়। আহত ছাবুকে পাকবাহিনী বন্দি করে। খবরটি মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সেক্টরে পৌঁছলে কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীর নির্দেশে কমান্ডার দিলীপ দাশ ও জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা রশিদ বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। এর পর নব উদ্যমে ৫ ডিসেম্বর রাতে রাজাবাদ, চরগাঁও সংলগ্ন শাখা বরাক নদীর তীরে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে থানা ব্যাংকারে আক্রমণ শাণিত করে। রশদ ও গুলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে পাক সেনারা ৬ ডিসেম্বর ভোরে পালিয়ে যায়। ওইদিন দুপুরে হাজার হাজার জনতা শ্লোগান নিয়ে থানা প্রাঙ্গণে জড়িত হয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদী জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জকে শত্র“মুক্ত ঘোষণ করে সিলেট অভিমুখে সিলেট যাত্রা করেন।