মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য

31

মহান স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বার্ষিকীর দ্বার প্রান্তে, স্বাধীনতার ঘোষক জাতির জনক বাঙালির স্বপ্নদষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে লাখ-লাখ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীরত্বের সাথে প্রাণ দিযেছিল, বঙ্গবন্ধু সহ বাঙালি বীর সন্তানদের ভাস্কার্য স্থাপন করতে এতদিন কোনো সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে, তা স্বাধীনতাকামী মানুষের বোধগম্য হচ্ছে না।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় যে সব স্থানে হায়েনার বাহিনী ও তাদের দোসর ছাড়াও এ দেশীয় রাজাকারদের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, সে সব স্থান গুলোতে এত বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য স্থাপন করা নৈতিক দায়িত্ব হলেও করা হচ্ছে না। প্রয়োজন হলে তৎকালীন সময়ের যুদ্ধক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণে এনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ জাতির জনকের ভাস্কর্য নির্মাণ করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। নতুবা আমাদের রক্তে কেনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে রক্ষিত থাকবে না। এক সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বাঙালি জাতির প্রজন্মকে বিপথকামী করতে দ্বিধা বোধ করবে না।
বাঙালি জাতির ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যায়, শুধু বঞ্চনা লাঞ্ছনা আর প্রতারণার ইতিহাস। বাঙালি জাতি যুগে-যুগে অনেক রক্ত দিয়েছে। বিজাতিয়দের শাসন-শোষণ আর বঞ্চনার সীমা বেড়ে যায়। দেশ বিভক্ত হওয়ার পর বিজাতিয়রা বাঙালি জাতির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাইলে বাঙালি জাতি মারমুখি হয়ে উঠে। এদেশীয় কতিপয় বাঙালি বিরোধী চক্র ভাষা আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি করে। বিজাতীয়দের পক্ষ নিয়ে বাঙালিদেরকে হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করেনি। এ চক্র মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতা করে আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার বাহিনী গঠন করে বাঙালি নিধন করে। এ চক্র মহান স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কিছু দালাল, বিজাতীয়দের দোসররা দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে গেলে ও তাদের মদদপিষ্ট কিছু বিশ্বাস ঘাতক দেশে থেকে যায়। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আসা কতিপয় সেনা কর্তৃক খন্দকার মোস্তাক এর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বপ্নদষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। সারা দেশে সামরিক স্বৈর শাসন শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাসী প্রগতিশীল নেতা-কর্মীদের উপর হুলিয়া জারি করে দিয়ে খন্দকার মোস্তাক তারই অনুসারীদেরকে নিয়ে সরকার গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য; বাঙালি জাতীয়তাবাদ, প্রকৃত গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন না করে ৭২ সালের সংবিধানসহ বাঙালি জাতির হাজারো বছরের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে দেশ পরিচালনায় যুক্ত করে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধীরা বাঙালি জাতির রক্তে মাখা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে মন্ত্রীত্ব করে। এসব স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তাদের অপতৎপরতা চালাতে গিয়ে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। সারা দেশে বাংলা ভাইয়ের নামে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল। দেশে বহুদিন স্বৈরাচারী শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের কান্ডারী সংগঠন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করে।
স্বাধীনতার অর্ধশতাধিক বছর পেরিয়ে গেলে ও মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষক জাতির জনকের ভাস্কর্য নির্মাণে যারা বাধার সৃষ্টি করছে তারাই একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের অনুসারী। এদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা করণের বিকল্প নেই।