দোয়ারাবাজারে মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের, ধূম্রজাল সৃষ্টি

10

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে জোবায়ের আহমদ (১১) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যুতে থানায় অপমৃত্যু মামলা হলেও তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে নানামুখি গুঞ্জন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে দাবি করলেও বিষয়টি নিয়ে কানাঘোষা চলছে। পুলিশ মৃত্যুর মূল রহস্য (ক্লু) উদঘাটন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, জোবায়ের দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের বড়বন্দ গ্রামের কবির আহমদের ছেলে ও উপজেলাধীন জামেয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মদীনাতুল উলুম দোহালিয়া মাদ্রাসার হিফ্জ শাখার ছাত্র। মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রাবাসেই অবস্থান করছিল সে। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতের খাবার শেষে সহপাঠিদের সাথে ঘুমিয়ে পড়ে জোবায়ের। পরদিন সকালে (রবিবার) তাকে মৃত বলে থানায় খবর দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে ছাত্রাবাস থেকে জোবায়েরের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এসময় ছাত্রাবাস থেকে হামিম ও আব্দুল হামিদ নামের সন্দেহভাজন দুই ছাত্রকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন তারা। ওইদিন বিকালে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও ছাতক-দোয়ারাবাজার জোনের এএসপি (সার্কেল) বিল্লাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা প্রধান মাওলানা ফজলুল করিম জানান, রবিবার ফজরের সময় সহপাঠিদের ডাকে জোবায়ের সাড়া না দিলে ঘুমে বিভোর মনে করে তারা নামাজ আদায় করতে চলে যান। নামাজ শেষে বোর্ডিং সুপারসহ সকলেই জোবায়েরের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে থাকলে তাকে মৃত বলে নিশ্চিত হন সকলে। আর এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। মৃত জোবায়েরের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরার বিষয়ে তিনি বলেন, মৃত্যু কী না সেটা নিশ্চিত করতে মরদেহ নাড়াচাড়া ও ওলট-পালট করায় হয়তো নাক-মুখ দিয়ে কিছুটা রক্ত ঝরতে পারে। তবে নিহতের পিতা কবির আহমদ ছেলে জোবায়েরের মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়ে মাদ্রাসা আঙ্গিনায় তাকে কবরস্থ করার অনুমতি দেন বলেও তিনি জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই এ মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলে বলাবলি কানাঘোষা করছেন। অনেক চেষ্টার পরও জোবায়েরের পিতা কবির আহমদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে এএসপি (সার্কেল) বিল্লাল হোসেন ও দোয়ারাবাজার থানার ওসি নাজির আলম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। সন্দেহভাজন নিয়ে আসা দুই ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ওসি নাজির আলম জানান, রবিবার রাত ৮টায় কথিত মাদ্রাসা মাঠে জানাযা শেষে সেখানেই জোবায়েরকে সমাহিত করা হয়েছে। তবে মৃত মাদ্রাসাছাত্র জোবায়েরের মৃত্যুর কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায় কী না সেজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অপরদিকে ময়না তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায়ও আছি। থানায় অপমৃত্যু মামলা হলেও মৃতের অভিভাবকের মতামত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।