আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হতে এখনও ১০ মাস বাকি। তবে ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের সময় ঘোষণার পরপরই নড়েচড়ে বসেছেন দলটির পদপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলন ঘিরে সারাদেশে ধারাবাহিক সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করার ব্যাপক কর্মযজ্ঞ নিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত থাকলেও আগামী সম্মেলনে কার ভাগ্যে কী জুটবে, কে পদোন্নতি পাচ্ছেন আর কারা পদ হারাচ্ছেন? আগামী নতুন নেতৃত্বে ব্যাপক নাকি সামান্য পরিবর্তন আসবে- এমনটা এখন ক্ষমতাসীন দলের চায়ের টেবিলে কমন প্রশ্ন।
টানা দশম বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হতে যাচ্ছেন ৪১ বছর ধরে দলটির নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা কন্যা ছাড়া দলটির কোটি কোটি নেতাকর্মী-সমর্থক আর কাউন্সিলর-ডেলিগেটররা বিকল্প কাউকে ভাবতেও পারে না, মেনেও নেবে না। তবে সবারই দৃষ্টি সাধারণ সম্পাদক পদটির দিকে। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদেরের হ্যাটট্রিক নাকি চমক দেয়ার মতো অন্য কেউ? কে নতুন পদ পাচ্ছেন, কারা পদ হারাচ্ছেন- সম্মেলনের দীর্ঘ সময় বাকি থাকলেও এখন থেকেই দলটিতে গুঞ্জন-আলোচনা তুঙ্গে।
করোনার মহামারীর কারণে প্রায় দুই বছর স্থবিরতা কাটিয়ে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে চাঙ্গা ও শক্তিশালী করতে একগুচ্ছ মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। টার্গেট ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সকল মহানগর-জেলা-উপজেলা-পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলা। দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে চলতি মাসে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই বৈঠকে তৃণমূলের সম্মেলনের পাশাপাশি ডিসেম্বরে দলের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে দলের বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়েই ঈদের পর পরই আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও নির্বাচনমুখী করে গড়ে তুলতে একযোগে মাঠে নামবেন।
দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দেন। দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বর মাসে হওয়ার কথা। তিন বছর পর পর আমাদের সম্মেলন হয়, সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বরে আমাদের নির্ধারিত সময়। সেই সম্মেলনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রম চলমান। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ সালের ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই জাতীয় সংসদ এবং আমাদের দলের জাতীয় সম্মেলন-দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। এ দিক লক্ষ্য রেখেই দলকে একটি স্মার্ট সংগঠনে পরিণত করা হবে।
২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর মেয়াদী এ সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ডিসেম্বরে। এর আগে জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে আওয়ামী লীগে চলছে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞ। পবিত্র রমজান মাসেও দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা স্ব-স্ব বিভাগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করছেন এবং সারাদেশের কোন কোন জেলা-মহানগর-উপজেলায় দলের মধ্যে বিভেদ বা কোন্দল রয়েছে সেসব জায়গা চিহ্নিত করতে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আমাদের সম্মেলন সময়মতো হবে। আমরা সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে অনেক জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের আগেই আমরা তৃণমূল সম্মেলন শেষে করে সময়মতোই জাতীয় ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করবো। তাঁদের মতে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যার ভেতরে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক চর্চা হয়। নেতাকর্মীদের মতপ্রকাশের অধিকারসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলে কাউন্সিলররা আসবেন, সেখানে আলাপ-আলোচনা হবে, মতবিনিময় হবে। কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী তিন বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা নির্বাচিত হবেন।
আসছে সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে প্রকাশ্য কেউ মুখ খুলতে চান না। তবে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই দলের সভাপতির পদের ক্ষেত্রে আপোসহীন। তাঁদের মতে, মূল নেতৃত্ব (শেখ হাসিনা) যেহেতু সর্বজনশ্রদ্ধেয়, সর্বজন আকাক্সিক্ষত এবং অপরিহার্য, সেহেতু বাকি পদগুলো পরিবর্তন বা ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকা সম্পর্কে এত আগে বলার মতো কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। তবে আসছে সম্মেলনে নিচের দিকের ক’জন নেতা পদোন্নতির সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম বলেই তাঁরা ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে এমন ধারণা করছেন।
সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করে ও চাঙ্গা করে তুলতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জাতীয় কাউন্সিল এবং নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশে দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তাঁদের মতে, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সংগঠনের অভ্যন্তরে পরস্পরবিরোধী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এরা দলের ক্ষতি করছে। অধিকাংশ এলাকাই দেখা যায়, ব্যক্তি স্বার্থে দলাদলি। প্রভাব বিস্তার করে রাখার বিরোধ। এগুলো দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েই এবার মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মূলত আগামী জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তির এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ দলাদলি ও বিরোধ জিইয়ে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই যত দ্রুত অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামাল দেয়া যাবে, দলের জন্য তা মঙ্গল হবে। এসব দিক আমলে নিয়েই দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা নিয়েই সারাদেশে দল গুছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞের মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের চায়ের টেবিলে এখন প্রধান আলোচনা এবং গুঞ্জনই হচ্ছে আগামী সম্মেলনে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন। তবে আলোচনা ও গুঞ্জনের প্রধান ইস্যুই হচ্ছে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা নিয়ে। কেউ বলছেন, ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করবেন। আবার কেউ বলছেন, দলে একজন ব্যক্তির টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কোন নজির নেই। সেদিক বিবেচনায় সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের চায়ের টেবিলে ঘুরে ফিরেই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য কয়েকজন নেতার নাম বেশ জোরেশোরেই উঠে আসছে। ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁদের নাম বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নাম। অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও আছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আলোচনায়।
অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম আসলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রনে আগামী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রী সভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবীন ও প্রবীণের সম্মিলনে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটিতে তারুণ্যের নতুন রক্ত সঞ্চালন করা হতে পারে।