কর্মকর্তারা শহরে থাকায় ॥ ওসমানীনগরে প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা

7

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাস ভাড়া করে সিলেট শহরে অবস্থান করায় দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কর্মস্থলে না থেকে শহর থেকে আসা যাওয়া করার বিষয়ে জবাবদিহিতা না থাকায় নবপ্রতিষ্ঠিত এ উপজেলার অফিসগুলোর দাফতরিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাকার সরকারি নির্দেশ থাকলেও এ সংক্রান্ত নির্দেশনাকে আমলে দিচ্ছেন না এ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তা না থাকায় সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মচাররা নানা অনিয়মে জড়িয়ে বিভিন্ন কাজে অফিস পাড়ায় গিয়ে ধর্ণা দেয়া সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছেন আর্থিক সুবিধা।
জানা যায়, এ উপজেলার ইউএনও মোছা. তাহমিনা আক্তার, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফসানা তাসলিমসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তা উপজেলা সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর সিলেট শহর থেকে অফিস করছেন। এতে বেশির ভাগ দিনই তারা সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। অনেক সময় তারা জেলা শহরে প্রশাসনিক কাজ দেখিয়ে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। ফলে উপজেলায় সেবা নিতে আসা লোকজন প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন।
প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলায় যোগদান করা এলইজিডি প্রকৌশলী নাজমুল করিম নানা অজুহাতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ইউএনও মো. তাহমিনা আক্তার ওসমানীনগরে যোগদান করে সিলেট শহর থেকে যাওয়া-আসা করছেন। এতে উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েও তাকে সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউএনও কর্মস্থলে না থাকার সুযোগে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের বেশির ভাগও কর্মস্থলে অবস্থান না করে শহরে অবস্থান করছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ দিকে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দু-দল গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ বাঁধলে তাৎক্ষণিক বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বালাগঞ্জ অংশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিলেট শহরে থাকায় ওসমানীনগর অংশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় একদিন পর। এ ছাড়া বর্তমান করোনা সংকটকালিন সময়ে ইউএনওসহ কর্মকর্তারা এলাকায় না থাকায় প্রতিক্ষেত্রে স্বাস্থবিধি লঙ্গিত হয়। এমন কী উপজেলায় করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। সরকারী নির্দেশনা নিয়েও নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ভূমি অফিসে কর্মরত অধিকাংশরাই সিলেট শহরে অবস্থান করায় সাধারণ জনগণ গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগের সেবা পেতে বার বার ধর্ণা দিতে হচ্ছে।
সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়তি দত্ত, মৎস্য কর্মকর্তা মাশরুফা তাসনিম, শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিলীপময় চৌধুরী, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হক সানী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায়, এলজিইডি কর্মকর্তা নাজমুল করিম, ইউএনও অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রঞ্জিত চৌধুরীসহ আরো কয়েক কর্মকর্তা সিলেট শহরে অবস্থান করে ওসমানীনগরে অফিস করছেন।
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হক সানী বলেন, আমার স্ত্রী সিলেট শহরে চাকুরী করেন। সে সুবাদে আমাকেও সিলেট শহরে অবস্থান করতে হয়।
সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়তি দত্ত বলেন, আমি সিলেট শহর থেকেই কর্মস্থলে যাওয়া আসা করি। বর্তমানে ১৫ দিনের ছুটিতে রয়েছি।
মৎস্য কর্মকর্তা মাশরুফা তাসনিম প্রথমে সিলেট শহর থেকে কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও সংবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসের প্রথম থেকে ওসমানীনগরে বাসা ভাড়া নিয়েছেন তিনি। প্রকল্প কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় বলেন, সিলেট শহর থেকেই আমি নিয়মিত যাতায়াত করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা নাজমুল করিমের মন্তব্য জানতে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তার ব্যবহৃত সরকারি ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এসিল্যান্ড আফসানা তাসলিম বলেন, উপজেলার কোন কোয়ার্টার না থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অনুমতি নিয়েই আমি সিলেট শহরে থাকছি।
ইউএনও মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, ওসমানীনগরে অবস্থান করার জন্য সরকারি ভাবে বাসস্থান না থাকায় আমাকে সিলেট শহর থেকেই অফিস করতে হয়। তবে অন্যরা কেন কর্মস্থলে থাকছেন না সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।