বঙ্গবন্ধুর চিরবিদায়ও ছিল বীরের মত

8

মো: আব্দুল মালিক

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন অকুতোভয় জাতীয়তাবাদী নেতা, একজন বীর বাঙালি। তাঁর এই বীরত্বের প্রকাশ ঘটে একেবারে শৈশবে, অব্যাহত থাকে আমৃত্যু। এই মহান নেতার জন্ম শতবার্ষিকী ও পয়ঁতাল্লিশতম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।
১৯৩৮ সাল। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ আসবেন। তাঁদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এনিয়ে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে আড়াআড়ি চলছিল। কারণ শেরে বাংলা মুসলিম লীগের সাথে মিলে মন্ত্রী সভা গঠন করেছেন। এ সময় দু’একজন মুসলমানের উপর অত্যাচারও হলো। আব্দুল মালেক নামে বঙ্গবন্ধুর এক সহপাঠী ছিল। তাকে ‘হিন্দু মহা সভা’র সভাপতি সুরেন ব্যানার্জীর বাড়িতে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকজন ছাত্র নিয়ে সেখানে হাজির হন। তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শেখ মুজিবকে দেখে রমাপদ নামে একজন হিন্দু ভদ্রলোক তাঁকে গালি দেন। তিনিও তাঁর প্রতিবাদ করেন। রমাপদ থানায় খবর দিলে তিনজন পুলিশ এসে হাজির হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেও শেখ মুজিব তার সহপাঠী আব্দুল মালেককে ছেড়ে দিতে চাপ দেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল মারপিট হয়। তিনি দরজা ভেঙ্গে আব্দুল মালেককে কেড়ে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় হিন্দু নেতারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। “সকাল নয় টায় খবর পেলাম আমার মামা ও আরো অনেককে গ্রেফতার করে ফেলেছে। আমাদের বাড়িতে কী করে আসবে-থানার দারোগা সাহেবদের একটু লজ্জা করছিল। প্রায় দশটার সময় টাউন হল মাঠের ভিতর দাঁড়িয়ে দারোগা আলাপ করছে, তার উদ্দেশ্য হলো আমি যেন সরে যাই। টাউন হলের মাঠের পাশেই আমার বাড়ি। আমার ফুফাতো ভাই মাদারীপুর বাড়ি। আব্বার কাছে থেকেই লেখাপড়া করত, সে আমাকে বলে, মিয়া ভাই, পাশের বাসায় একটু সরে যাও না।’ বললাম, ‘যাব না, আমি পালাব না। লোকে বলবে, আমি ভয় পেয়েছি।” অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃষ্ঠা: ১১,১২। তখন তিনি মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ধর্মঘট আহ্বান করে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ৫ মার্চ থেকে এই ধর্মঘটে যোগ দেয়। এ ঘটনায় মোট সাতাশ জন ছাত্রকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান সহ ছয় জনকে জরিমানা করা হয়। অন্যরা জরিমানা দিয়ে বিশ^ বিদ্যালয়ে ফিরে আসেন কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান জরিমানা দিতে অস্বীকার করেন। তাঁর আর বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া হলো না। শেখ মুজিব মুচলেকা দিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়তে অস্বীকার করে বলেছিলেন- “শেখ মুজিব আবার এই বিশ^বিদ্যালয়ে আসবে তবে ছাত্র হিসেবে নয়, একজন দেশকর্মী হিসেবে।” হ্যাঁ তিনি বিশ^বিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।
১৯৬৬ সাল। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনমত গঠন করছেন। এতে ভীত হয়ে পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৬৮ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রদ্রোহিতার একটি মামলা দায়ের করে। ১৯৬৯ সালের ২৮ জানুয়ারি একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা খ্যাত “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য” মামলার প্রধান আসামী শেখ মুজিব বিশেষ ট্রাইবুনালে তাঁর ঐতিহাসিক জবানবন্দি প্রদান করবেন।
সকাল ১০.০৫ মিনিট। কড়া সামরিক প্রহরায় শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের ট্রাইবুনালে আনা হলো। শেখ মুজিবের পরনে ছিল তাঁর চিরাচরিত পাজামা, পাঞ্জাবী, হাত কাটা কালো কোট, চোখে কালো পুরু ফ্রেমের চশমা। মুখে সিগার পাইপ। দর্শকদের দিকে তাকালেন, মুচকি হাসলেন, দুহাত নাড়লেন, মাথা এদিক ওদিক নাড়ালেন, আত্মীয় স্বজনরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন কিন্তু তিনি নির্বিকার। আবার হাসলেন। তারপর নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়লেন।
সকাল ১০.১০ মিনিট বিচারপতি ত্রয় আসন গ্রহণ করলেন। ফাইলপত্র খুললেন, চারদিকে পিনপতন নিরবতা। শেখ মুজিব পায়ের উপর পা তুলে শান্ত ভাবে বসে আছেন। একমনে টেনে চলেছেন তাঁর প্রিয় পাইপ।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, বিচারপতি এম.এ রহমান নড়ে চড়ে বসলেন। একবার তাকালেন ট্রাইব্যুনাল কক্ষের দিকে। তারপর অর্ডার অর্ডার বলে একটি ফাইল হাতে তুলে নিলেন। তাকালেন শেখ মুজিবের দিকে। তারপর ধীরস্থির কন্ঠে সরকার কর্তৃক আনীত অভিযোগ সমূহ পাঠ করলেন, বললেন, আপনি শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানী সরকারের আনীত অভিযোগের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে আপনি আপনার আত্মপক্ষ সর্মথন করে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।
১০.১৫ মিনিট। শেখ মুজিব উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পদক্ষেপে কাঠগড়ায় গিয়ে উঠলেন। শপথবাক্য পাঠ করলেন। শেখ মুজিব কোর্টের ভেতর থেকে কয়েক পৃষ্ঠা কাগজ বের করলেন। একবার তাকালেন দর্শকদের দিকে। সহসা তাঁর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তারপর জলদগম্ভীর উদাত্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন- ‘মি: চেয়ারম্যান, স্বাধীনতাপূর্ব ভারতীয় বঙ্গীয় মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আমার বিদ্যালয় জীবনের সূচনা হইতে আমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করিয়াছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে আমার লেখাপড়া পর্যন্ত বির্সজন দিতে হইয়াছে। …………। বর্তমান মামলা উল্লেখিত নিষ্পেশন ও নির্যাতন নীতির পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। অধিকন্তু স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক শোষণ অব্যাহত রাখার যে ষড়যন্ত্রের জাল বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিস্তার করিয়াছে এই মামলা তাহার বিষময় প্রতিক্রিয়া। আমি কখনও এমন কিছু করি নাই বা কোনদিনও এই উদ্দেশ্যে স্থল, নেভি বা বিমান বাহিনীর কোন কর্মচারীর সংস্পর্শে কোন ষড়যন্ত্রমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করি নাই। আমি নির্দোষ এবং এ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।” এভাবেই তাঁহার জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর সরকার নিশর্তভাবে ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
৭ মার্চ ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু ও পাকিস্তানের বোমারু বিমানের ভয়কে জয় করে কৌশলে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ অপারেশন সার্চ লাইটের রাতে মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে স্বাধীনতা ঘোষনা করে তিনি পালিয়ে যান নি, বাসায় অবস্থান করেন। সেদিন রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন তাকে গ্রেফতার করে তখন তিনি বীরের মতো অবিচল ছিলেন। গ্রেফতারের পর সামরিক প্রহরারত অবস্থায় পাকিস্তান সরকার তাঁর যে ছবিটি প্রকাশ করে সেখানে তাঁকে বীরের মত বসে থাকতে দেখা যায়।
৯ আগষ্ট ১৯৭১। পাক সরকার এক বিবৃতিতে জানাল ১১ আগষ্ট বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হবে। আসামী শেখ মুজিব তাঁর বক্তব্য পেশের উপযুক্ত সুযোগ পাবেন। নিজের পছন্দমত তিনি যে কোনো পাকিস্তানি আইনজীবী নিযুক্ত করতে পারবেন। তাঁর বিচার সম্পর্কে, আবির আহাদ নামক একজন সাংবাদিককে তিনি বলেন, “আমাকে পেশোয়ারের একটা কুখ্যাত কারাগার থেকে ১০ আগষ্ট রাতে কড়া পাহারায় বের করে আনা হলো। তারপর লায়ালপুর সামরিক কারাগারে ঢুকালো। একজন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ারকে আমার পাহারায় রাখা হলো। ১১ তারিখ সকাল ১০টায় আমাকে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কোনো এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেই বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল বসেছে। বেলা ১১টায় আমাকে বিচার কক্ষে হাজির করা হলো। আমার সামনে সামরিক পোশাক পরিহিত তিনজন অফিসার। এরাই আমার বিচার করবে। তিনজনের মাঝখানের অফিসার সম্ভবতঃ একজন ব্রিগেডিয়ার, আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও পাকিস্তানকে খন্ড-বিখন্ড করার মারাত্মক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে আপনি শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে এই আদালত আপনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছে, আপনি ইচ্ছে করলে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।’ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কথা শোনার পর আমি নিজের অজান্তে হাসিতে ফেটে পড়ি। বলি, চেয়ারম্যান সাহেব, আপনার প্রেসিডেন্ট সাহেব কি জানেন না যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আইনানুগ রাষ্ট্রপতি ? আমার বিচার করার ক্ষমতা আপনার সরকারের আছে কি ? এ কথাটা আপনি দয়া করে আপনার প্রেসিডেন্টকে বলবেন। অবশ্য আমি আপনাদের হাতে বন্দী। আপনারা অনায়াসেই আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। তবে মৃত্যুর ভয়ে শেখ মুজিব ভীত নয়। জানেন কি, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। আমি আমার বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দিয়ে এসেছি। ওরা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করছে। আমাকে হত্যা করতে পারেন কিন্তু আমার জাতিকে নয়। ওরা হানাদার পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করছে, রক্তের প্রতিশোধ নিচ্ছে, আমার বাংলাদেশকে ওরা মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ…. মি: চেয়ারম্যান, আমার শেষ অনুরোধ, আমাকে হত্যা করার পর, আমার লাশটা আমার বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দিবেন।’
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। দেশ স্বাধীনের পর বন্দী শেখ মুজিবের সাথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভূট্টো দেখা করেন। তখনও বঙ্গবন্ধু জানতেন না বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তথাপিও তিনি ভূট্টোর সাথে যে ধরণের আলাপ করেছিলেন তাতে তাঁর আত্মমর্যাদা ও বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ ইংল্যান্ড, ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। বিশে^র প্রাচীন ও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও ভারত। এই দুইটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং পরবর্তী সময় বিশ^ নেতৃবৃন্দের সাথে তিনি যেভাবে মাথা উঁচু করে, আত্মমর্যাদার সাথে আলাপ আলোচনা করেছেন তা বিশে^র ইতিহাসে বিরল।
১৫ আগষ্ট ১৯৭৫। সেই ভয়াবহ কালোরাত। যে রাতে মীরজাফরের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতার পরাজিত শত্র“ এবং আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ি কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করে। সেদিন তৎকালীন সেনাপ্রধান কে.এম শফিউল্লাকে ফোন করে তিনি বলেছিলেন, “শফিউল্লা তোমার বাহিনী আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে, কামালকে বোধ হয় মেরে ফেলেছে, তুমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ কর।” তারপর তিনি তাঁর শখের পাইপ হাতে নিয়ে ঘর থেকে বারান্দায় বের হয়ে দেখেন তাঁর কাজের ছেলে আব্দুল গুলিবিদ্ধ। তিনি বীরের মতো গর্জন করে বলেন ও আমার কাজের ছেলে ওকে কেন গুলি করা হয়েছে ? “তোরা কে, কি চাস ? ” তখন সামনে থাকা সৈনিকটি ভড়কে একপাশে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পিছনে থাকা ক্যাপ্টেন হুদা ও মেজর নূর স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি বঙ্গবন্ধুর বুকে লাগে, তিনি সিঁড়ির উপর লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। সেই ঘটনাই সাক্ষ্য দেয় মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও তিনি ছিলেন বীরের মতো অবিচল। প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালানোর চেষ্টা না করে, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বা পরিবারের কথা চিন্তা না করে কাজের ছেলে আব্দুলের চিন্তায় মগ্ন। অভ্যাসগতভাবে অধীনস্তদের ভালো মন্দের খোঁজ নেয়া ও শাসন করা থেকে এ সময়ও তিনি বিরত থাকেন নি। পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, “যখন শত্র“র সম্মুখীন হইবে তখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিও না।” বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু এই সত্য লালন করেছেন।
পক্ষান্তরে তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষক সৈনিক জিয়া ২৫ মার্চ রাতে বীরের মতো তীরের বেগে তাঁর পাকিস্তানী কমান্ডারের নির্দেশে বন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন। সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে। পথিমধ্যে জনতার ব্যারিকেড অপসারণ করে যেতে দেরি হচ্ছিল। তখন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তাঁকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে কালুর ঘাটের দিকে চলে যান। অথচ ঐ সময় চট্টগ্রামে পুলিশ, ইপিআর, আর্মির ৭৫% ছিল বাঙালি। ইপিআর এর ক্যাপ্টেন রফিক প্রাণ পণে যুদ্ধ করছেন। জিয়া যদি সেদিন কালুরঘাটের দিকে না গিয়ে বন্দরের অস্ত্র গোলাবারুদ জনগণের হাতে তুলে দিতেন বা ধ্বংস করে ফেলতেন তাহলে যুদ্ধের গতি প্রকৃতি অন্যরকম হতো। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়া যখন সেনা বিদ্রোহে নিহত হন তখন কী তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহস দেখাতে পেরেছেন ?
জন্মিলে মরিতে হবে, এটি বিধির বিধান, তবে সকল মৃত্যু সমান নয়। কবির ভাষায়-
‘নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’।
বঙ্গবন্ধু তুমি প্রকৃতই একজন বীর ছিলে। মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও সেই বীরত্ব দেখিয়ে গেছো। তোমার ক্ষয় নাই, তুমি অমর, অক্ষয়। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তুমি ততদিন থাকবে কোটি বাঙালির হৃদয়ে। বিশে^র ইতিহাসে তোমার স্থান স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।