কমলগঞ্জে দলই চা বাগান চালুর দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও অবস্থান কর্মসূচী

9
কমলগঞ্জে দলই চা বাগান খুলে দেয়ার দাবিতে পদ্মছড়া বাগানে মানববন্ধন।

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দলই চা বাগান চালুর দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে শ্রমিকরা। বুধবার সকাল ৮ টা থেকে দলই চা বাগানের অফিসের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচী ও পদ্মছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা মানববন্ধন পালন করে। গত সোমবার সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে চা বাগান কর্র্তৃপক্ষ কারখানার অফিসে নোটিশ টাঙিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য দলই চা বাগান বন্ধ (লক আউট) ঘোষণা করে। আকস্মিকভাবে চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। চা বাগান চালু করার জন্য বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও ট্রেড ইউনিয়ন সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন জোর দাবি জানিয়েছে। তবে চা বাগান কর্তৃপক্ষ কতিপয় শ্রমিক কর্মচারীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানুর ইন্ধনে বাগানের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে বলে দাবি করছে।
উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ আকসিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন বাগানের প্রায় ৬শ’ চা শ্রমিক ও প্রায় সাড়ে তিন হাজার চা জনগোষ্ঠি। একদিন পরেই ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হলেও মালিক পক্ষের বেআইনী পদক্ষেপের কারণে মুসলিম শ্রমিকরা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। চা বাগান খুলে দেয়ার দাবিতে ও মজুরি প্রদানের জন্য বুধবার দলই চা বাগান অফিসের সম্মুখে শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে ও পদ্মছড়া চা বাগানে মানববন্ধন পালন করেছে।
দলই চা বাগান কোম্পানীর উপ-মহা ব্যবস্থাপক এম এম ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিসের বোর্ডে টাঙানো নোটিশে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য চা বাগান সম্পূর্ণ (লক আউট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
দলই চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক, সাধারণ সম্পাদক সেতু রায়, ইউপি সদস্য শিব নারায়ণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সোমবার সকাল থেকে বাগান ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা আমাদেরকে দিয়ে ৩ গুণ চা পাতা উত্তোলন করান। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ থাকবে না বলে কারখানার বাবু গোলাম হোসেন অতিরিক্ত কাজ করান। সে হিসেবে তারা এক দিনে ৩ গুণ কাজ করেছেন। তারা করোনাকালে কর্তৃপক্ষের বেআইনী ও এক তরফা সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বাগান চালু করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস বলেন, কোন রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করেই দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে বাগান বন্ধের নোটিশ প্রদান করে। অবিলম্বে বাগান চালু করে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ ও মালিক পক্ষের বেআইনী সিদ্ধান্তের জন্য শ্রম আইন ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
দলই চা বন্ধ বিষয়ে বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম জানান, চা বাগানের কতিপয় শ্রমিকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে বাগান বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে। এসব শ্রমিকদের উস্কানী দিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু। অভিযোগ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে শ্রমিকদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব বিষয় নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। তা বলতে গেলেই ব্যবস্থাপক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে উৎপাদন চলাকালীন সম্পূর্ণ বে-আইনী, একতরফাভাবে দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি ম্যানেজমেন্টের দায়ী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেন এবং দ্রুত নোটিশ প্রত্যাহার করে বাগান চালুর জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জোর দাবী জানান। তিনি আরও বলেন, বুধবার ইউএনও অফিসে এ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিষয়টি সুরাহা না হলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চা শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।