বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে তদন্তের সক্ষমতা নেই ইসির

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। তবে সরকারের কোনো এজেন্সি তদন্ত করে তথ্য দিলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচন ভবনে কমিশন বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ইসি সচিব বলেন, আজকে কমিশনের ৯৩তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চিঠি দিয়েছিলেন। বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে কমিশন দীর্ঘক্ষণ পর্যালোচনা করেছে। পর্যালোচনা করে যেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন, সেই সিদ্ধান্তটি হলো- বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল যে অডিট রিপোর্ট (আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট) দাখিল করে, তা নির্বাচন কমিশন পরীক্ষা করে। বিএনপি যে অডিট রিপোর্ট দাখিল করেছে তাতে এমন কোনো তথ্য নেই যে, বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া বিদেশে অর্থ পাঠানো হলে তার তদন্ত করা নির্বাচন কমিশনের আইনি কাঠামো ও সক্ষমতা নেই। নির্বাচন কমিশনের আইনি কাঠামোতে অর্থপাচার সংক্রান্ত কোনো তদন্ত করার বিষয় পড়ে না। তবে সরকারের যেসব এজেন্সি অর্থপাচারের বিষয়ে তদন্ত করতে পারে তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে পর্যালোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, কমিশন মনে করে এটি তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে পড়ে না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, কোনো দল পরপর তিন বছর অডিট রিপোর্ট না দিলে শুনানি করে নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী যেহেতু কমিশনে নিবন্ধিত নয়, তাই দলটির বিষয়ে ইসির কিছু করার নেই। কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেব।
সরকারের কোনো এজেন্সির তদন্তে লবিস্ট নিয়োগ প্রমাণিত হলে নিবন্ধন বাতিলের করা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, এটা কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। আইনে আছে দলগুলো অডিট রিপোর্ট দেবে, কমিশন খতিয়ে দেখবে।
কোন কোন অর্থবছরের বিষয়টি দেখেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগও লবিস্ট নিয়োগ করেছে অভিযোগ আছে, তাদেরটা কেন দেখেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইসিতে অভিযোগ আসেনি।
২০২১ সালের ২৬ আগষ্ট বিএনপি সর্বশেষ হিসাব জমা দিয়েছে ইসিতে। সেই হিসাবটি ছিল ২০২০ পঞ্জিকা বছরের।
২০২০ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। ব্যয় বেশি হয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ লাখ ৩৬৪ টাকা। যা বিএনপির তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে।
২০১৯ পঞ্জিকা বছরে যে হিসাব দিয়েছিল দলটি তাতে সে বছর আয়ের চেয়ে তিনগুণের বেশি ব্যয় হয়েছিল। সে সময় বিএনপির আয় করেছে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। আয়-ব্যয়ের পার্থক্য হচ্ছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা। অর্থাৎ আয়ে তিনগুণেরও বেশি ব্যয় হয়েছে।
তার আগে টানা তিনবার ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি ছিল দলটির।
দলগুলো মনোনয়ন ফরম বিক্রি, দলীয় সদস্যদের মাসিক চাঁদা, এককালীন অনুদান হতে আয় করে থাকে। আর অফিসের বিভিন্ন খরচ, নির্বাচনী ব্যয়, ত্রাণ কার্যক্রম, কর্মচারী বেতন-ভাতা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন প্রভৃতি খাতে ব্যয় করে থাকে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, ২০১৮ বছরে দলটির আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা। তখন দলীয় তহবিলে মোট উদ্বৃত্ত ছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা।
২০১৭ সালে দলটি মোট আয় দেখিয়েছিল ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা। আর মোট ব্যয় দেখিয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা হাতে বা ব্যাংকে রয়েছে।
২০১৬ সালে দলটি আয় হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা। আয় বেশি হয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টাকা।
এর আগের তিন বছর দলটি ঘাটতিতে ছিল। ২০১৫ পঞ্জিকা বছরে বিএনপি ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৮৪ টাকা ঘাটতি দেখিয়েছিল। ওই সময় দলটি আয় দেখিয়েছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ টাকা।
২০১৪ পঞ্জিকা বছরে দলটি বিভিন্ন খাতে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৪ টাকা আয় দেখিয়েছে। আর ব্যয় দেখিয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। এতে আয়ের চেয়ে ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৬ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে দলটির।
২০১৩ পঞ্জিকা বছরে দলটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকা আয়ের বিপরীতে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৬ টাকা ব্যয় দেখিয়েছিল। সে সময় ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।
প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সময় সময় যেসব তথ্য চাইবে তা দলগুলোকে দিতে হবে। পরপর কোনো দল আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করার ক্ষমতা আছে ইসির।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন, বিএনপি লবিস্ট নিয়োগে অর্থ ব্যয় করেছে। আর সেই ব্যয়ের তথ্য দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবে ইসিকে না দিয়ে থাকলে ব্যবস্থার নিতে।
গত ১৮ জানুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিএনপি সাড়ে ৩৭ লাখ ডলার খরচ করেছে, যার বর্তমান মূল্যে ৩২ কোটি টাকার মতো।