কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ বঞ্চিত খাসিয়া পুঞ্জিসহ দু’টি গ্রাম

8
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরে বিদ্যুৎবিহীন কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি।

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জিসহ দুইটি গ্রাম বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সরকার প্রধানের অনুমতি ছাড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে বনায়ন ব্যতীত ভিন্ন কাজ নিষিদ্ধ করায় গ্রাম দুইটি বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত রয়েছে দেড়শত পরিবার। ফলে এসব নীতিমালা ও নিষেধাজ্ঞায় সরকারি বনের ভেতরে বসবাসরত কমলগঞ্জের দু’টি খাসিয়া পুঞ্জি বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে।
কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান রিতেংগেন খেরিয়াম বলেন, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করল। অথচ কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পুঞ্জির বাহিরের কালেঞ্জি গ্রাম এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫টি পরিবারের দৈনন্দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত পুঞ্জির সদস্যরা। বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দুটি গ্রামে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুঞ্জির নারী পুরুষ সদস্যরা টিলার নিচের কুপ থেকে পানি সংগ্রহ করে টিলার উপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত হলে বৈদ্যুতিক পাম্প বসিয়ে নিচ থেকে টিলার উপরে ঘরে ঘরে পানি তোলা যেতো।
তবে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সনের ২৯ মার্চ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩২তম সভায় ১১ এর (ঘ) নম্বর সিদ্ধান্তে ‘বন ও পরিবেশের ক্ষতিরোধকল্পে বনের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং রাস্তা নির্মাণসহ যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের পূর্বে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে প্রকল্প প্রণয়নের জন্য মন্ত্রী পরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমুহকে অবহিত করার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।’ এছাড়াও ২০১৮ সনের ২২ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে বনভূমির মধ্যে বিওপি স্থাপন, রেললাইন, রাস্তা, ড্রেন এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে স্থানীয় পর্যায়ে বনবিভাগের মাধ্যমে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন, রাস্তা নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কাজে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বন অধিদপ্তরের অনাপত্তি প্রয়োজন। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে জমির মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণ পত্রও দরকার। এসব জটিলতার কারণে খাসিয়া সম্প্রদায়ের কালেঞ্জি পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
আদমপুর বনবিট কর্মকর্তা শ্যামল রায় বলেন, কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও গ্রামে বিদ্যুতায়নের জন্য ইতিপূর্বে বন বিভাগ একটি জরিপ সম্পন্ন করলে বিদ্যুতায়ন কাজ শুরু করার সম্পর্কে তার কাছে বন বিভাগের কোন নির্দেশনা আসেনি। সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বনবিভাগের অনাপত্তি পত্র প্রয়োজন।
রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবু তাহের বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন। তাছাড়া ২০১৮ সনের এপ্রিল মাসে মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও বলা হয়েছে বনের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে বনবিভাগের পূর্বানুমতি গ্রহণ প্রয়োজন।