বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকুন – প্রধানমন্ত্রী

9
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সচিবালয় প্রান্তে মন্ত্রী পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের বিভিন্নস্থানে চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি বন্যায় দেশের মানুষের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার মন্ত্রী সভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বন্যায় ত্রাণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে এই নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সচিবালয় প্রান্তে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভায় সভাপতিত্ব করেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনলাইনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিকের প্রশ্নে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, আজ বন্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বন্যা নিয়ে আমরা যেন সবাই প্রস্তুত থাকি। মন্ত্রী সভায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম, উদ্ধার অভিযান- এগুলো কীভাবে হচ্ছে? উনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, দেখা যাচ্ছে যমুনা ও পদ্মার পানি, মেঘনার পানি আসছে না। মেঘনার পানি যেটা ছিল সেটা ফ্লাশফ্লাডের পানি ছিল ৬/৭ দিন। যমুনা দিয়ে পানি বেশি আসছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে প্রস্তুত। আমরাও রেগুলার মনিটর করছি।
প্রধানমন্ত্রী কোন নির্দেশনা দিয়েছেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাতে কোনভাবেই মানুষের কোন ক্ষতি না হয় রিলিফের যেন কোন ঘাটতি না হয়। বিশেষ করে মানুষ যারা চরে থাকে, এরাই বন্যার সময় বাঁধের দিকে চলে আসে। যে স্কুলগুলো আছে সেখানে চলে এসেছে। সেখানে যেন তাদের জীবন-জীবিকা বা খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধা না হয় এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট যেন সর্বত্রই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা হেডকোয়ার্টারে থাকবে এবং ইউনিয়ন লেভেলে যারা কাজ করে তারা যেন সব সময় এলাকায় থাকেন।
তিনি বলেন, পদ্মায় ৬ দশমিক ৭ মিটার পানির উচ্চতা। স্বাভাবিক থাকে ১ মিটার। আর বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে পানি। পানির স্পীড বেশিÑ ৩ দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ৩। ৩ দশমিক ৩ হলো, একটা জিনিস যদি রাখেন তাহলে এক সেকেন্ডে ২০ ফুট দূরে চলে যাবে। ওখানে শুধু পানি হলে সমস্যা ছিল না, পানির সঙ্গে অনেক উপাদান রয়েছে। শুধু পানি থাকলেও এটা কম থাকে, যদি পানির সঙ্গে মাটি থাকে তা হলে তা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের আগে সেতু বিভাগে থাকার সময়ে পদ্মায় কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, সে বিষয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তবে শেষ হিসাব অনুযায়ী এ নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সোমবার দুপুরে বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৗশলী মোঃ হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর, রহদহ ও সারিয়াকান্দি সদরসহ সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার মোট ১৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এবং পাট, ধানসহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পানিবন্দী এলাকার অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া যমুনা চরের অনেকে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে নৌকায় তীরে চলে আসছেন। বন্যা দুর্যোগ থেকে স্থায়ী সমাধান খুঁজতে তারা চরের পৈত্রিক ভিটামাটি ছেড়ে আসছেন।
হুমায়ুন কবির জানান, যমুনা নদীতে বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয় ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। সোমবার দুপুর ১২টার হিসাব অনুযায়ী নদীর পানি ১৭ দশমিক ৬৫ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অর্থাৎ বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি জানান, বাঙালী নদীতে বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয় ১৫ দশমিক ৮৫ মিটার। এখন এ নদীর পানি ১৫ দশমিক ৭৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অর্থাৎ এ নদীর পানিও বেড়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। এর আগে রবিবার সন্ধ্যা ৬টার হিসাব অনুযায়ী যমুনা নদীর পানি ১৭ দশমিক ৭১ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।