করোনা আক্রান্ত সন্দেহে দুবাই প্রবাসী শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি ॥ সিলেট জুড়ে আতংক ॥ ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

34

স্টাফ রিপোর্টার :
এই প্রথম সিলেটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এক দুবাই প্রবাসী নগরীর শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে তিনি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে করোনা সন্দেহে তাকে সিলেট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য পাঠানো হয়। তার নাম- জাকারিয়া (৩২)। তিনি কানাইঘাট উপজেলার সুতারগ্রামের হাফিজ আলী হোসেনের পুত্র।
জানা গেছে, গত বুধবার দুবাই ফেরত জাকারিয়া দুপুরে নগরীর পাঠানটুলাস্থ রাগিব রাবেয়া হাসপাতালে জ্বর, কাশি ও মাথাব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে যান। চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি তা না করে বাসায় অবস্থান করেন। পরে রাতে তিনি সিলেট ওসমানী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে ওসমানী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দেখেন ও তার কাছ থেকে সমস্যাগুলো শুনেন। যেগুলো করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর সবগুলো লক্ষণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাকে নগরীর শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই প্রবাসী গত ২৯ ফেব্র“য়ারি দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন।
এদিকে করোনা ভাইরাসে সনাক্ত করার কোন পরীক্ষা সিলেটে না থাকায় তার রক্তের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট ওসমানী হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, করোনা সন্দেহে ভর্তি যুবকের রক্ত সংগ্রহ করেছে আইসিসিডিআর’র টিম। এখন রক্ত ঢাকায় পাঠিয়ে টেস্ট করা হবে আসলেই তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। টেস্টের রিপোর্ট ২ দিন পর আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে এই যুবককে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের একটি কেবিনে রেখে নিয়মিত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তাকে জনসমাগম এড়িয়ে কিছুদিন আলাদা থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া ড. হিমাংশু আরো জানান, ওই প্রবাসী অনেকদিন থেকেই শ্বাসকষ্টে ভোগছিলেন। তিনি দুবাইতে একটি হোটেলে কাজ করতেন। সেই হোটেলে চীনের বেশ কয়েকজনও অবস্থান করছিলেন। একারণে তার প্রতি সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে। তবে কোনোকিছুই এখনও নিশ্চিত নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু হয়নি। তবে সতর্ক থাকতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সন্দেহ রোগীকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের একটি কেবিনে রেখে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আইসিসিডিআর’র টিম এসে তার রক্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। রক্ত টেস্ট করার পর তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না রিপোর্ট ২ দিন পর আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলামকে প্রধান করে একটি মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: প্রেমানন্দ মন্ডলকে। সিলেটের পুলিশ সুপার, ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা তথ্য অফিসার, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সদস্য রাখা হয়েছে। এছাড়া, উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয়েছে আলাদা কমিটি।
অপর দিকে সিলেটে করোনা ভাইসার আক্রান্ত রোগ পাওয়া গেছে একটি খবর গত বুধবার রাত থেকে নগরীতে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হতে থাকে। কেউ কেউ এ ধরণের খবর ভুয়া আখ্যাতি করেন আবার অনেকেই রোগীর নাম-ঠিকানা ও বর্তমানে তার অবস্থান ইত্যাদি তুলে ধরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে চান। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে সর্বসাধারণের মাঝে ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।