সিন্ডিকেটের হাতে আলুর বাজার, তিন জাতের আলুর তিন দাম

57
নগরীর বন্দরবাজারের সবজি বাজার।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট নগরীতে নিত্যপণ্য দ্রব্যের মধ্যে বিভিন্ন জাতের মসলা, আলু ও কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আলু ও কাঁচা মরিচের দাম পাইকারী ও খুুচরা বাজারে পার্থক্য রয়েছে। যে আলু পাইকারী বাজারে ২৫ টাকা সেই আলু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায় আর পাইকারী বাজারে কাচা মরিচের দাম ১২০ টাকা দরে কেজিপ্রতি বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এর দাম ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা মানুুষের নাগেলের বাহিরে চলে গেছে।
নগরীর সোবহানীঘাট চালিবন্দরের ট্রেড সেন্টার সবজি মার্কেটের পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানালেন, করোনা ভাইরাস ও বন্যার কারণে আলুুর দাম ব্যাপারীরা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, মুন্সিগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়ার আলু ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়েছে। সে অনুযায়ী এখানের পাইকারী বাজারে আলুু ২৫ টাকা কেজি প্রতি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারে পাইকারীদের কোন সিন্ডিকেট নেই। এখানে ব্যাপারীরা যে দাম দেয় সে দামে এখানে আলুু বিক্রি করা হয়। একবার ফখর উদ্দিন-মঈন উদ্দিনেরর আমলে আলুর দাম ছিল ৩০ টাকা কেজি প্রতি আর এখন সেই দামে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে।
তারা আরো জানান, যদি সরকার আলু ব্যাপারীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারে তাহলে আলুর দর নেমে আসতে পারে। তা না হলে আগামী আলু মৌসুমের অপেক্ষা করতে হবে ক্রেতাদের।
বর্তমানে কাঁচা মরিচের দাম শুনলে ক্রেতার চোখে পানি এসে যায়। এমনটি জানালেন বন্দরবাজারস্থ খুচরা বাজার থেকে কাচা মরিচ কিনতে আসা দক্ষিণ সুরমা জৈনপুরের সেলিম মিয়া।
খুুচরা বাজারের সবজি কিনতে আসা আরো কয়েকজন ক্রেতা এ প্রতিবেদককে জানালেন, রমজানের পর থেকে নগরীর নিত্যপণ্যের বাজারে মনিটরিং সেল বা ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান না থাকায় ইচ্ছেমত ব্যবসায়ীরা পাইকারী ও খুচরা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। তারা জানালেন- এখন ব্যবসায়ীরা বন্যার কথা বলছেন। ক্ষেতের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সবজির দাম বাড়ছে। পানি নেমে গেলে ২/১ মাস পর জিনিসপত্রের দাম কমে আসার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের মালামাল একস্থান থেকে অন্যস্থানে আনা-নেয়া করতে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় জিনিসিপত্রের দামও অনেকটা বেড়েছে বলে বলছে ব্যবসায়ীরা।
পাইকারী সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বস্তার মুুখ সামনে খুলে ৩ জাতের সারি বেঁধে ৬০ থেকে ৭০ কেজির বেশ কয়েকটি আলুুর বস্তা বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। এসব আলুর মধ্যে রয়েছে মুন্সিগঞ্জী, রাজশাহী ও বগুড়ার আলু। কিন্তু দাম কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। মুন্সিগঞ্জী দেখতে আকারে লম্বা অসুন্দর কিন্তু খেতে সুস্বাদু আর এ আলু পচে খুব অল্প সময়ে। রাজশাহীর আলু আকারে লম্বাটে দেখতে সুন্দর কিন্তু খেতে ভালো নয় তবে এই আলু দেরীতে পচন ধরে। আর বগুড়ার কাটিলাল আলু দেখতে সুুন্দর খেতে তেমন একটা স্বাদ নেই। আবার এ আলু রাখা যায় অনেকদিন পচন ধরে কম।
এখানে বস্তা ও পাল্লা দরে (৫ কেজিতে এক পাল্লা) মুন্সিগঞ্জী আলু কেজি প্রতি দর ২৫ টাকা ২৫ পয়সা, রাজশাহী আলু কেজি প্রতি সাড়ে ২৫ টাকা ও বগুড়ার কাটিলাল আলু কেজি প্রতি সাড়ে ২৫ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। এসব আলু মৌসুমে মজুদ করে কলস্ট্রোলে রাখা হয়। সেখান থেকে অর্ডার পেয়ে আলু বাজারে চলে আসে। এখন বেড়ে যাওয়ায় খুুচরা আলুর প্রতি ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।
ট্রেড সেন্টার সবজি মার্কেটের হাসান বাণিজ্যালয় আড়ৎ কমিশন এজেন্টের মালিক আব্দুর রহমান জানান, এবার আলুর দর বাড়তি। কারণ আমদানী আলু আগে বেশী থাকায় দর কম ছিল। এখন বন্যার কারণে আমদানী কম হওয়ায় আলুর দর বেশী। করোনা ভাইরাস রোগ আসার প্রথম দিকে আলু ত্রাণ দেয়ার জন্য বেশী করে ক্রেতারা আলু কিনেছেন। এ অবস্থা দেখে আলু ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম কেজি প্রতি দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আমরা এ আলু বিক্রি করতে হয় ২৫ থেকে সাড়ে ২৫ টাকায় কেজি প্রতি। আর বস্তা বিক্রি করতে হয় ১৪৮০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকায়। আগে এই আলু কেজিপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ টাকায় ব্যাপারি কাছ থেকে কিনে ২/১ টাকা লাভে বিক্রি করা হতো।
আলুু ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানালেন, আলুর দর বেড়ে যাওয়ায় গরীবরা এখন অন্যান্য সবজির সাথে আলু কিনছেন কম। আর ভোক্তাদের চাহিদাও এখন অনেকটা কমে গেছে। ফলে আমাদের বেচা-বিক্রিও কমে গেছে। তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি বুঝে আলু ব্যাপারীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর দাম বাড়াচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, একমাত্র ফখর উদ্দিন-মঈন উদ্দিনের আমলে একবার ৩০ টাকা কেজি প্রতি আলু বিক্রি হয়েছে। সে দরে এখন ৩০ টাকা কেজি প্রতি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। তার মতে, ব্যাপারীরা আলুর দাম বাড়ায়, কমায়।
এই আড়তের শ্রমিক মামুন মিয়া জানালেন, আলুর দাম বেশী হলেও এ মার্কেটে আলু মজুদের কোন ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত আলু রয়েছে এ মার্কেটে তা দিয়ে আসন্ন কোরবানীর ঈদে চাহিদা মেটানো সম্ভব। তিনি বলেন, এখানে পাশাপাশি দু’টি সবজির মার্কেটে প্রায় ৩০ থেকে ৫০টির মতো আড়তের দোকান রয়েছে। এসব মার্কেটে ব্যবসায়ীদের আলু ব্যাপারীদের মতো সিন্ডিকেট নেই। তিনি জানান, বর্তমানে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আলু আড়তে নিয়ে আসতে হলেও পরিবহনের ভাড়াও অনেকটা বেড়ে গেছে। এখন ২০ টাকার আলু খুচরা বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারা আলুু কিনছেন কম।
পাইকারী ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাকাইকারী বাজারে গাজর কেজি প্রতি ৪০ টাকা আর খুচরা বাজারে এটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মুকি ২৮/৩০ টাকা আর খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬০। পটল ২৫ টাকা খুুচরা বাজারে ৩০ টাকা, বেন্ডি ১৮/২০ টাকা আর খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ২৫ টাকা, পেঁপে ২২ টাকা আর খুচরা বাজারে ৩০ টাকা, কারগুল ভালটা ২৫ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ৩০ টাকা, জিংগা ২২ টাকা আর খুচরা বাজারে এটা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, চিচিংগা কেজি প্রতি ২০ টাকা আর খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, করোলা কেজি প্রতি পাইকারী বাজারে ৩৫ টাকা আর খুুচরা বাজারে এ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, টমেটো ৭০/৮০ টাকা আর খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।
খুচরাবাজারে কেজি প্রতি লুুভি ৫০ টাকা, সাতকরা হালি ৪০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কমড়ার সাইজ বুজে প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বাংলা লাউও প্রতিটি সাইজ বুজে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত, মুুলা কেজি ৩০ টাকা, কুমড়া প্রতিপিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন কেজিপ্রতি ৪০ টাকা ও পুরল ৪০ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজি পাইকারী বাজারে ১ থেকে ৭ টাকাও পর্যন্ত কম পাওয়া যায়। তবে পাইকারী বাজারে এসব সবজি পাল্লাপ্রতি (৫ কেজিতে এক পাল্লা) কিনতে হয়।
খুচরা বাজারে এলসি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০/২২ টাকায়, সুবসাগর পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২০ টাকা এবং পেঁয়াজের মধ্যে সবচেয়ে সেরা এক নাম্বার দেশী পেঁয়াজ ছোট হলেও এটার স্বাদ অসাধারণ বর্তমানেএ পেঁয়াজ ৪৫ টাকা থেকে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতের রসুন কেজিপ্রতি ৭০ টাকা, দেশী রসুন ১০০ টাকা, আদা ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মসলার দামও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।