সরকারি প্রণোদনা বিতরণ প্রসঙ্গে

8

করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি তো আছেই। করোনার ক্ষতিকর প্রভাব এখনো চলমান। প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সব পর্যায়েই ক্ষতি হয়েছে। লকডাউন বা সাধারণ ছুটি যেভাবেই বলি না কেন, এ সময়ে ৯৫ শতাংশ মানুষ উপার্জনের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৯ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সারা দেশে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে এ কথা জানিয়েছে ব্র্যাক।
বিষয়টি চিন্তার উদ্রেক করে বৈকি। জরিপে বলা হয়েছে, ৫১ শতাংশ মানুষের খানাভিত্তিক আয় শূন্যে নেমেছে অর্থাৎ তাদের কোনো উপার্জন নেই। দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল ও স্বল্প আয়ের ৬২ শতাংশ মানুষ চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছে। আর্থিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ২৮ শতাংশ মানুষ। অবস্থার কিছু বদল ঘটছে এখন; দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা জীবিকায় ফিরছেন। তবে এই ব্যক্তিদের অনেকের কমপক্ষে তিন মাসের নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা লাগবে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী লকডাউনের আগে খানার গড় মাসিক আয় ছিল ২৪ হাজার ৫৬৫ টাকা। মে মাসে তা সাত হাজার ৯৬ টাকায় দাঁড়ায়। শহর এলাকায় আয় কমার হার বেশি ৭৯ শতাংশ। গ্রামে আয় কমেছে ৭৫ শতাংশের বেশি। নারীপ্রধান খানার আয় কমেছে ৮০ শতাংশ, পুরুষপ্রধান খানার আয় কমেছে ৭৫ শতাংশ। নারীপ্রধান খাতের উদ্যোক্তাদের ৫৭ শতাংশের কোনো উপার্জন নেই।
ব্র্যাকের হিসাবটি খানাভিত্তিক। এতে আয় পরিস্থিতির স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। অন্যদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) একটি শ্রেণিভিত্তিক হিসাব দিয়েছে। সিপিডির জরিপে দেখা গেছে, করোনাকালে ৬৩ শতাংশ শ্রমিক বাসাভাড়া দিতে পারেনি। ৩৯ শতাংশ শ্রমিক বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবার বিল দিতে পারেনি। অর্থসংকটের কারণেই তা হয়েছে। ৮৬ শতাংশ শ্রমিক মার্চের পুরো মজুরি পেলেও এপ্রিলে পুরো মজুরি পেয়েছে ১৫ শতাংশের মতো শ্রমিক। পোশাক শ্রমিকদের পরিবারগুলোকে গড়ে তিন হাজার ৭৬৫ টাকা ধার করতে হয়েছে। করোনায় আর্থিক সমস্যার চিত্র এ দুটি জরিপে উঠে এসেছে।
এসব সমস্যার সমাধান শেষ পর্যন্ত সরকারকেই করতে হবে। তাই করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারঘোষিত প্রণোদনার অর্থ বিতরণে যথাযথ নজরদারি করতে হবে। খুব চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিধিমালার মাধ্যমে প্রণোদনার অর্থ বিতরণ করতে হবে। সেটা করা না গেলে বৈষম্য বাড়বে। অস্থিতিশীলতাও তৈরি হতে পারে। এ জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যায় কি না ভেবে দেখতে পারে সরকার।