পরের বাড়ীতে বসত করেন ওরা

20

নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে কাটে তাদের জীবন। স্বাধীন দেশে এ যেন এক পরাধীনতার কারাবাস। ভীমখালী ইউনিয়নে সরকারি গুচ্ছ গ্রামে এদের মাথা গুজার ঠাঁই চাই।।
নিজস্ব বসত ভিটা না থাকায় চরম লাঞ্ছনা বঞ্চনা আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে চলছে তাদের দিনকাল। সব সময় আশ্রয়দাতার মন যুগিয়ে চলতে হয়। হতদরিদ্র এই মানুষ গুলো দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন। কেউ ফেরিওয়ালা কেউ আবার বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। আরেকজন লেবারের কাজ। নীচের ডান সাইডের জয়নাল দিন মজুর। সংসারের গ্লানি টান টানতে কেউ যেন পড়ন্ত বেলায় উপনীত হয়েছেন। মাথা গুজার এক টুকরো ঠাঁই জোগাড় করতে পারলেন না। জীবন যুদ্ধে ওরা যেন পরাজয়ের শেষ মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাদের এক্টাই আপসোস মাথা গুজার ঠাঁই জোগাড় করে যেন মরতে পারেন। বলছিলাম জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কয়েকজন উদ্বাস্তু মানুষের কথা।
ফেকুল মাহমুদপুর গ্রামের মোঃ আরজ আলী (৭২)বর্ষায় ফেরী নৌকা বেয়ে আর হেমন্ত দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। জীবন যুদ্ধে তিনি একজন পরাজিত সৈনিক। এক ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। বড় মেয়ে বিয়ে হয়েছে। নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই। গ্রামের অনেকের বাড়িতে আশ্রিত থেকেছেন। এখন হাফিজ মনিরুজ্জামান এর বাড়িতে আশ্রিত হয়ে বসবাস করছেন। বয়সের ভারে এখন আগের মত কাজ করতে পারেন না। ছেলে দিন মজুরি করে তার বাবাকে সহযোগিতা করছে।
একই গ্রামের মস্তুরা বেগম (৬৩)। স্বামী মৃত মাহমুদ আলী। তিনি মাহমুদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী। তার সংসারে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মস্তুরার স্বামী নিজের বাড়ি বিক্রি করে মারা যান। কিছুদিন চলার পর মস্তুরা বেগম গন্তব্যেহীন পথে যাত্রা শুরু করেন। চোখে মুখে ঘোর অমানিশা। গেলেন বাপের বাড়ি। সেখানে তার ঠাঁই হয়নি। চলে আসলেন মেয়ের জামাই বাড়িতে। মেয়ের জামাই একই ওয়ার্ডের কান্দাগাঁও গ্রামের মৃত রহিম আলীর ছেলে হেলাল। তারাও আশ্রিত। তাদর নিজের কোন বাড়ি নেই। অনেক বছর নিজ গ্রামের আব্দুল মন্নান এর বাড়িতে থেকেছেন। এখন একই ইউনিয়নে মানিগাঁও গ্রামে লন্ডনীর বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছেন। একমাত্র মেয়ের কাছেই মস্তুরা বেগম শেষ ভরসা। মেয়েও আজ এর বাড়িতে কাল অন্যের বাড়িতে। ভাগ্য বিড়ম্ভনায় পড়েছেন মস্তুরা বেগম। হেলাল দিন মজুরি করে সংসার চালান।
আরেক হৃদয় বিদারক ঘটনা। একই গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুছ এর ছেলে সামছুজ্জামান (৩২)। কদ্দুছ মিয়ার ৬ মেয়ে ২ ছেলের সংসার ছিল। বড় ছেলে নূরুজ্জামান বিয়ের পর পাকিস্তান চলে যায়। নিখোঁজ ছিল প্রায় ৪০ বছর। কদ্দুস মিয়ার সবার ছোট ছেলে সামছুজ্জামানকে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে বেতের চাউল্লাইন ও পাখা বিক্রি করে ছেলের বউ নাতি নাতনি সহ বিশাল সংসার চালাতেন। এক খন্ড বাড়ি ছিল তখন। কদ্দুস মিয়া ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মারা যান। বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে দেশে আসে। বড় ভাই মারা যান। কদ্দুস মিয়ার আরও ২ মেয়ে বিয়ে দিতে হয়। অবশেষে ঋণের টাকার জন্য বসত বাড়িটি বিক্রি করতে হল। সামছুজ্জামানের পরিবার টি আজ গ্রাম ছাড়া। নূরুজ্জানের স্ত্রী ছেলে মেয়ে তার শশুর বাড়িতে আছে। সামছুজ্জামান নিজের বসত বাড়ি না থাকায় বউ বাচ্চা নিয়ে বড় বোনের বাড়ি জয়নগরে আশ্রয় নিয়েছে। মাঝে মধ্যে কদ্দুস মিয়ার মেয়েরা যখন বাপের ভিটা (বিক্রি) দেখতে গ্রামে আসে তখন তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতস প্রকম্পিত হয়। এত গুলো মানুষের মাথা গুজার ঠাঁই নেই। ওদের জীবন কচুরি ফেনার মত। এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি ছাড়া কিবা করার আছে তাদের।
এ রকম বসত বাড়ি নেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন চান্দেনগর গ্রামের রবিউল আওয়াল এর ছেলে ছুরুতুজ্জামান, একই গ্রামের মত্তুজ আলীর ছেলে দুলাল মিয়া। মৃত মাহমদ আলীর ছেলে হেলাল। মৃত আব্দুল খালিক এর ছেলে বাবুল মিয়া। কান্দাগাঁও গ্রামের মৃত রহিম আলীর ছেলে হেলাল/জয়নাল আবেদীন সহ আরো অনেকেই।