ঋণের টাকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

5

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগও আছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাজেটের একটি বড় অংশ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত বছরের শুরুতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি বেশি হয়। তখন এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশও করে সংস্থাটি। তখন স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে সংসদেও প্রশ্ন উঠেছিল।
বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে পিপিই, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, গগলসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় যে খরচ ধরা হয়েছে, তা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি। চলমান মানবিক দুর্যোগের সময় যেখানে চিকিৎসা উপকরণের দিকে জোরালো নজর দেওয়া দরকার, সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশি ঝোঁক চিকিৎসাবহির্ভূত খাতে। চিকিৎসা সরঞ্জামে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে। করোনা সংকট মোকাবেলায় জরুরি বিবেচনায় এরই মধ্যে প্রকল্প দুটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় দুটি অনুমোদনও পেয়েছে। প্রকল্প দুটিতে আছে ব্যাপক ত্রুটিবিচ্যুতি। টাকা খরচের ক্ষেত্রে আছে দ্বৈধ। অর্থ অপচয়ের প্রচুর সুযোগ হয়েছে উভয় প্রকল্পে। আর সে কারণেই প্রাক্কলিত খরচে পরিকল্পনা কমিশনও আপত্তি জানিয়েছে।
কভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ঋণ নিয়ে এগিয়ে এসেছে এটি আমাদের জন্য নিশ্চিতভাবেই ভালো খবর। এমনিতেই নানা প্রণোদনা ও সহায়তা দিতে গিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। এই ঋণ আমাদের স্বাস্থ্য খাতের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু এই ঋণের টাকা খরচের ক্ষেত্রে সেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে।