কুলাউড়ায় যাত্রা ও জুয়ার প্রতিবাদ করায় জুয়াড়ীদের রোষানলে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী

73

কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা :
যাত্রা, হাউজি বাম্পার, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের প্রতিবাদ করায় জুয়াড়ীদের রোষানলে পড়েছেন কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পীরের বাজারের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজন। জুয়াড়ীদের নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন মানুষ। গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পীরের বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাজীপুর ইউপি সদস্য আব্দুল মুনিম, মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব আলী, মাওলানা আলতাবুর রহমান, পীরের বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক গুলজার আহমদ, হাজী রহমত আলী, মাওলানা শামছুদ্দীন, শামীম আহমদ, শওকত আলী, রফিজ আলী, সুলতান আহমদ ও আব্দুল খালিক জানান, পীরের বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী ও মানুষজনও হুমকিতে আছেন। গত কয়েকদিন ধরে হাজীপুর ইউনিয়নের পীরেরবাজার ও বালিয়া এলাকার লোকজন শমসেরনগর বাজারে যেতে সাহস পাচ্ছে না।
লিখিত বক্তব্যে পীরের বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি রাজা মিয়া জানান, পীরের বাজার সংলগ্ন কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের বৈদ্যনাথপুর গ্রামে যাত্রা, হাউজি-বাম্পার, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য আয়োজনের জন্য প্যান্ডেল তৈরী করেছিল চিহ্নিত জুয়াড়ীরা। এর প্রতিবাদে ২৩ নভেম্বর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত স্মারকলিপি দিয়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারে ২৪ নভেম্বর পীরের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদ সভা চলাকালে ১৫টি মোটর সাইকেলে ৩০ জন বখাটে লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দেয়। মহড়ার এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতার সাথে সংঘর্ষ বাঁধলে জনতা ৪টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। ১ ডিসেম্বর সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শমসেরনগর বাজারে থেকে শমসেরনগরের রাজু মিয়া (২৫), হারুন মিয়া (৩০), কেছুলুটি গ্রামের জামাল খান (২৬), শিংরাউলী গ্রামের শেখ রাজু (২৫), পীরের বাজারের  জামাল (২৩) ও রাঙ্গাটিলা গ্রামের খলিল (৩২) রাজা মিয়ার ছেলে শাহীন আহমেদসহ ভাগ্নে সামাদ আলীকে মোটরসাইকেলসহ অপহরণ করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক মতিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শমসেরনগর বাগান সড়কের সোহানের বাসা থেকে মোটরসাইকেলসহ অপহৃত শাহীন ও সামাদকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ সোহান ও রাজু মিয়া নামক ২ জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী নেতা রাজা মিয়া বাদী হয়ে সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িতরা লোকমুখে ও মুঠোফোনে রাজা মিয়া ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতা অভিযোগ করেন, পুলিশী তৎপরতা থাকলেও তিনি যেভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তা পরিবর্তণ করে থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ৩ ডিসেম্বর (বুধবার) কুলাউড়া থানায় তিনি আরও একটি লিখিত অভিযোগ করেন বলে ব্যবসায়ী নেতা জানান। সেই সাথে বাকি আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতারেরও দাবি জানান।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়কাপন গ্রামের এক মাজারের পাশে প্রকাশ্যে বসে জুয়ার আসর। শুধু জুয়া নয় সেই আসরে মাদক ও সুদের ব্যবসা চলে বলে জানা গেছে।
বড়কাপন গ্রামে ওই মাজারের পাশে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে জুয়ার আসর। এই আসর নিয়ন্ত্রণ করে একটি সিন্ডিকেট। এই আসরে জুয়া খেলার পাশাপাশি চলে সুদের ব্যবসা। জুয়াড়ীরাই এই সুদের মুল গ্রাহক। জুয়া খেলতে খেলতে যাদের টাকা ফুরিয়ে যায়, তারা ধার নেন টাকা। একদিন দু’দিনে গুণতে হয় দ্বিগুণ টাকা। ফলে জুয়ার আসরে এসে অনেকে মোটরসাইকেলসহ অনেক মূল্যবান সামগ্রী হারানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন এই জুয়ার আসরে লক্ষাধিক টাকা হাতবদল হয় বলে জানা গেছে। জুয়ার আসরের সেলামি যায় প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। গত ৭ ডিসেম্বর কুলাউড়া থানা পুলিশ এই আসরে অভিযান চালায়। কিন্তু সেই অভিযান নিষ্ফল ছিলো। কারণ পুলিশী অভিযানের আগেই খবর পৌছে যায় আসরে অংশগ্রহণকারীদের কাছে। এই অভিযানের পর জুয়ার আসরটি বর্তমানে ২শ গজ ভেতরে ধান ক্ষেতের মাঠে নিয়মিত বসে বলে জানা গেছে। শুধু জুয়া কিংবা সুদ নয় আসরের সদস্য মদ, গাঁজা আসক্ত থাকেন। ফলে এই আসর গোটা এলাকার মানুষের কাছে এক আতংকের কারণ।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর জানান, এদের কি করবো ? এখন উন্মুক্ত মাঠে বসে জুয়ার আসর। স্থানীয় লোকজন সচেতন হলে শুধু তা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।