শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনই খোলা হবে না – প্রধানমন্ত্রী

36
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সচিবালয় প্রান্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ও পরিসংখ্যান প্রকাশের উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেজন্য এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে না। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাচ্ছি। যাতে করে এই করোনাভাইরাসে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত না হয়। কারণ এরা (শিক্ষার্থী) আমাদের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত তো আমি ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। সেই কারণে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্মুক্ত করব না। আমরা দেখি, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে পর্যায়ক্রমে আমরা তখন উন্মুক্ত করব।
রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশকালে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের গত দুই মাসের সুদের চাপ কমাতে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এর ফলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া আনুমানিক ১ কোটি ৩৮ লাখ ঋণ গ্রহীতা সরাসরি উপকৃত হবেন। ইতোমধ্যে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, এই দুই মাস যেহেতু সব কিছু বন্ধ, কাজেই এখানে সুদ টানার প্রয়োজন হবে না। এখানে আমরা তাদের কিছু সুযোগ সুবিধা দেব।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। সারাদেশে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সচিবালয় থেকে অনলাইনে পরীক্ষার ফলের সংক্ষিপ্ত সার প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং পিএমও সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফেসবুক লাইভে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ বছর সারাদেশ থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ ২৩ জন কৃতকার্য হয়।
এসএসসির ফল প্রকাশকালে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট না করে ঘরে বসে পড়াশোনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব সবাই যেন ঘরে বসে পড়াশোনা করে। এটা একটা পড়াশোনার ভাল সুযোগও। আমাদের নিজেদেরও এখন বেশি কাজ নেই- অনেক কিছু জানার ও পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। সেটাও কম কথা না। এখানে আমি বলব সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে।’
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে লেখাপড়া করে নিজেদের তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে। সেটাই আমি চাই। আমি ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করব তারা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। শিক্ষকদেরও বলব তাদের সেই শিক্ষাই দেবেন, এই শিক্ষাটা হচ্ছে শুধু নিজে ভাল থাকা না, দেশের কল্যাণে কাজ করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা। মানুষের কল্যাণেই যেন তারা নিবেদিত প্রাণ হয়, সেই শিক্ষাই তারা যেন গ্রহণ করে। দেশকে ভালবাসা, মানুষকে ভালবাসা, মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করার শিক্ষা। যেটা জাতির পিতা আমাদের বার বার শিখিয়েছেন।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করবে। আমার বিশ্বাস, এই করোনাভাইরাসের আঘাত থেকে শীঘ্রই বিশ্ব মুক্তি পাবে, বাংলাদেশও মুক্তি পাবে। যেকোন সঙ্কটে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নিজের আত্মবিশ্বাসটাই বড়। মনে রাখতে হবে, আমরা বিজয়ী জাতি। করোনাভাইরাসসহ যেকোন দুর্যোগে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। যেকোন ঝড়-ঝাপ্টা আসুক, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমরা মোকাবেলা করব। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাব।
শিক্ষাখাতে সহযোগিতা বন্ধ হবে না : অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট ধাক্কা এলেও তার সরকার শিক্ষা খাতে যেসব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিল সেগুলো বন্ধ হবে না। প্রাইমারী থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সরকারের দেয়া বৃত্তি এবং উপবৃত্তি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতই ক্ষতিগ্রস্ত হই না কেন আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা এই সহযোগিতাটা অব্যাহত রাখব। পাশাপাশি, বছরের শুরুতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং নানা শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কর্মসূচীও এ সময় অব্যাহত থাকবে।
তার সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে ফল ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পরীক্ষার ফলাফলে কেউ হয়তো পাস করেছে, আবার কেউ হয়তো পাস করতে পারেনি। যারা পাস করতে পারেনি তাদের মন খারাপ না করে আবার লেখাপড়া করে যেসব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়েছে সেসব বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক, শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সকলকে স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং সেক্ষেত্রে সকলকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সবকিছু দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। তাই, আমি দেখতে পাচ্ছি অন্য দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং যাতায়াতসহ নানা বিষয় অল্প অল্প করে উন্মুক্ত করছে। কাজেই আমরাও সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি।