পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত, ছিল না কোলাকুলি, আনন্দ-উল্লাস ॥ ঈদের জামাতে করোনা মুক্তির প্রার্থনা

6
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার দরগাহ মসজিদে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

স্টাফ রিপোর্টার :
এবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের জামাতে লাখ লাখ মুসুল্লিদের করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনা জানিয়ে সুন্দর ও শান্তির পৃথিবী ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন আল্লাহর দরবারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দু’হাত তুলে দেশ তথা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর উৎসবের দিনে কান্নারত ছিলেন মুসল্লিরা।
সিলেটের বিভিন্ন মসজিদে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় সবধরনের বালা-মুসিবত থেকে সুরক্ষায় প্রার্থনা করা হয় মহান আল্লাহর দরবারে। ঈদ জামাত শেষে দেখা মিললো অচেনা দৃশ্যের। স্বজন-পরিজন, একে অন্যে কেবল দূর থেকেই বিনিময় করলেন ঈদ শুভেচ্ছা। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বুকে টেনে নেওয়ার আবেগটুকুতে ছেদ ফেললো। একে অন্যের মধ্যে নেই আলিঙ্গন। উৎসবের দিন পানসে, নেই কোনো অনুভূতি। সবার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে করোনা ভাইরাস।
গত সোমবার ২৫ মে শারীরিক দূরত্ব রেখে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ধর্মীয়ভাবে উদযাপন হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার উন্মুক্ত স্থানে বা ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি।
নগরীর শাহী ঈদগাহে এবার ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শাহজালাল দরগাহ মাজার মসজিদ, হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ ও খাসদবীরস্থ জামেয়া মদীনাতুল উলুম দারুসসালাম মাদ্রাসা মসজিদে দু’টি করে এবং বন্দরবাজারস্থ কালেক্টরেট মসজিদে ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সকাল সাড়ে ৯ টায় নগরীর তোপখানা উত্তর কাজিরবাজারস্থ মোহাম্মদ মকন জামে মসজিদে ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন হাফিজ মাওলানা শফিকুর রহমান।
শাহজালাল দরগাহ মাজার মসজিদে ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি সকাল সাড়ে ৮টায় এবং দ্বিতীয়টি সাড়ে ৯টায়। এর একটিতে ইমামতি করেন হাফিজ মাওলানা আসজাদ আহমদ ও অপরটিতে হাফিজ মাওলানা হুজায়ফা হুসাইন। বন্দরবাজার হাজী কুতরত উল্লাহ জামে মসজিদেও ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় একটি আর সাড়ে ৯টায় আরেকটি। একটিতে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব সাঈদ বিন নুরুজ্জমান আলমদানি এবং অপরটিতে মসজিদের সিনিয়র মোয়াজ্জিন। বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ঈদের জামাত একটাই অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মাওলানা আবু হুরায়রা নোমান। সিলেট কালেক্টরেট মসজিদে ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা ও ১০টায় এ জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর নগরীর খাসদবীর জামেয়া মদীনাতুল উলুম দারুসসালাম মাদ্রাসা মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল ৮টা এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়।
নামাজ শেষে নগরীর প্রতিটি মসজিদেই করোনামুক্তির জন্য স্রষ্টার কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসুল্লিরা। এসময় মুসুল্লিদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে চারপাশ। পাশাপাশি দেশ ও জাতির সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এবার সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৯২৪টি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশ। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় ১৭৫টি ও জেলার উপজেলাগুলোর ৭৪৯টি মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।