খোশ আমদেদ মাহে রমজান

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কেয়ামতের পূর্বাভাস সম্পর্কে ইদানীং সমাজে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়। করোনাভাইরাস মানুষকে বিশ্ব সভ্যতার বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। আজ ২২ রমজান। সঙ্গত কারণে সে সম্পর্কে প্রশান্তির আলোচনা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স) কে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন- লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? আপনি তাদের বলে দিন, এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে।
তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও জমিনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের ওপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। (সূরা আ’রাফ-১৮৭)
বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর রেওয়ায়েতক্রমে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, রাসুলে কারীম (স) কিয়ামতের আকস্মিক আগমন সম্পর্কে বলেছেন, মানুষ নিজ নিজ কাজে পরিব্যস্ত থাকবে। এক লোক খরিদ্দারকে দেখানোর উদ্দেশে কাপড়ের থান খুলে সামনে ধরে থাকবে, সে (সওদাগর) এ বিষয়টিও সাব্যস্ত করতে পারবে না, এরই মধ্যে কিয়ামত এসে যাবে। এক লোক তার উটনীর দুধ দুইয়ে নিয়ে যেতে থাকবে এবং তখনও তা ব্যবহার করতে পারবে না, এরই মধ্যে কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ নিজের হাউস মেরামত করতে থাকবে-তা থেকে অবসর হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। কেউ হয়তো খাবার লোকমা হাতে তুলে নেবে, তা মুখে দেয়ার পূর্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে। (রুহল-মা’আনী)
যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত মৃত্যুর তারিখ ও সময়-ক্ষণ অনির্দিষ্ট ও গোপন রাখার মধ্যে বিরাট তাৎপর্য নিহিত রয়েছে, তেমনিভাবে কিয়ামতকেও- যা সমগ্র বিশ্বের সামগ্রিক মৃত্যুরই নামান্তর, তাকে গোপন এবং অনির্দিষ্ট রাখার মধ্যেও বিপুল রহস্য ও তাৎপর্য বিদ্যমান। তা না হলে একে তো এতেই বিশ্বাসীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে এবং পার্থিব যাবতীয় কাজকর্ম অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তদুপরি অবিশ্বাসীরা সুদীর্ঘ সময়ের কথা শুনে ঠাট্টা বিদ্রুপের সুযোগ পাবে এবং তাদের ঔদ্ধত্য অধিকতর বৃদ্ধি পাবে।
অবিশ্বাসীরা বলে, আমাদের ওপর কেয়ামত আসবে না। আপনি বলুন, কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তার আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ – সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে। তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ, তাদের প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক। (সূরা সাবা ৩-৪)।
কিয়ামত দিবসের পরিস্থিতি সম্বন্ধে সূরা লোকমানের ৩৩নং আয়াতে বলা হয়েছে: হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তান যেন তোমাদের প্রতারিত না করে।
সূরা মু’মিনের ৫১ ও ৫২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিয়ামতের কঠিন দিনে তিনি মুমিনদের সহায় হবেন। ইরশাদ হচ্ছে: আমি সাহায্য করব রাসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দণ্ডায়মান হওয়ার দিবসে। সেদিন জালেমদের ওজর আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্য থাকবে মন্দ গৃহ।’ এমন কোন জনপদ নেই, যাকে আমি কিয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না। এটা তো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। (বনী ইস্রাইল-৫৮)।
কিয়ামতের পূর্বাভাস সম্পর্কে সূরা নমলের ৮২নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন: যখন প্রতিশ্রুতি (কিয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এ কারণে যে, মানুষ আমার নিদর্শনসমূহ বিশ্বাস করত না।
মুসনাদে আহমদ নামক বিখ্যাত হাদিস সঙ্কলনে হযরত হুযায়ফা (রা) বর্ণিত রেওয়ায়েতে রাসুলুল্লাহ্ (স) বলেন, যে পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না। (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়া। (২) ধূম্র নির্গত হওয়া (৩) অদ্ভুত একটি জীবের আবির্ভাব হওয়া (৪) ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব হওয়া (৫) ঈসা (আ)-এর অবতরণ (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব (৭) তিনটি চন্দ্র গ্রহণ (ক) পশ্চিমে (খ) পূর্বে এবং (গ) আরব উপদ্বীপে। (৮) এক অগ্নি যা আদন থেকে নির্গত হবে এবং সব মানুষকে হাশরের মাঠে নিয়ে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্য অবস্থান করবে, অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদের নিয়ে চলবে।