দেশে দেশে কমছে করোনা ভাইরাস, উঠে যাচ্ছে লকডাউন

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকায় বিভিন্ন দেশে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জীবন ও জীবিকা। মূলত সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠায় স্বাভাবিক হতে আরম্ভ করেছে সবকিছু। এরই মধ্যে একমাস কোন মৃত্যু হয়নি ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে আর প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ানে টানা একমাস হয়নি কোন সংক্রমণ। সর্বশেষ ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ২০১ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৭ লাখ ২২ হাজার ৪২২ জন।
এক মাস করোনায় ‘মৃত্যুশূন্য’ চীন : করোনাভাইরাস মহামারী বেশ ভালভাবেই সামলে নিয়েছে চীন। গত একমাস ধরে দেশটিতে আর কেউ এ ভাইরাসে প্রাণ হারাননি। কিছু মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হলেও তাদের কারও অবস্থাই গুরুতর নয়। শুক্রবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে চার জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তারা সবাই উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জিলিন প্রদেশের বাসিন্দা। গত কয়েকদিন ধরে চীনের এ অঞ্চলটিতেই কিছুসংখ্যক রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। গত ডিসেম্বরে উহানে প্রথমবার শনাক্তের পর এ পর্যন্ত ৮২ হাজার ৯৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন।
একমাস সংক্রমণ ঘটেনি তাইওয়ানে : চীনের খুবই কাছের দেশ তাইওয়ানে এখনও সেভাবে করোনা সংক্রমণ ঘটাতে পারেনি। দেশটিতে লকডাউনের মতো কোন ঘটনাও ঘটেনি। বলতে গেলে তাদের জনগণ স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাপন উপভোগ করছে। করোনা ইউরোপ ও আমেরিকা ঘুরে এশিয়াতেও এখন বড় আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। কিন্তু গত ৩১ দিন ধরে তাইওয়ানে কোন আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।
স্লোভেনিয়ায় মহামারীর শেষ ঘোষণা : আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাস মহামারীর শেষ ঘোষণা করল স্লোভেনিয়ান সরকার। প্রথম ইউরোপিয়ান দেশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিল দেশটি। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৭ জনের কম নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে কেউ স্লোভেনিয়ায় এলে এখন আর অন্তত ৭ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে না।
এ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি যুক্তরাজ্যের : করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ্যান্টিবডি টেস্টে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) অনুমোদন পেল এ্যাবোট ল্যাবরেটরিজ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্যকে ৫০ লাখ টেস্টিং কিট দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
জাপানের জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার : জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা কমে আসায় দেশটির ৪৭ প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে ৩৯টি থেকে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তবে রাজধানী টোকিও, ওসাকা এবং উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইডো দ্বীপে জরুরী অবস্থা বহাল রয়েছে। শিনজো আবে বলেছেন, জাপানে করোনাভাইরাসের সর্বাধিক প্রাদুর্ভাবকালের চেয়ে বর্তমানে সংক্রমণ কমে সাত ভাগের এক ভাগ হয়েছে।
৩ জুন থেকে চলাচলের অনুমতি পাবে ইতালীয়রা : ইতালি লকডাউন শিথিল করে আগামী ৩ জুন থেকে দেশজুড়ে নাগরিকদের অবাধ চলাচলের অনুমতি দেবে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইতালিই মার্চে প্রথম দেশজুড়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। এখন সংক্রমণ কমে আসতে থাকায় দেশটি লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসছে।
সিঙ্গাপুরে ঈদের জামাত-হজযাত্রা বাতিল : করোনার কারণে এ বছরের ঈদ-উল-ফিতরের জামাত ও ৯০০ আবেদনকারীর হজযাত্রা বাতিল করেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল অব সিঙ্গাপুর (মুইস)। মুইস জানিয়েছে, ঈদের দিনও সিঙ্গাপুরের ৭০টি মসজিদই বন্ধ থাকবে। তবে ওইদিন সকালে মুসলিমরা নিজ নিজ বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের জামাতে অংশ নিতে ও খুতবা শুনতে পারবেন।
ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়াল : প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮২ হাজার ১০৩ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৪৯ জনে। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৭ হাজার ৯৭৭ জন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারতে তৃতীয় দফার লকডাউন চলছে। আগামী ১৭ মে এই দফার মেয়াদ শেষ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ : দেশটির মিশিগান অঙ্গরাজ্যে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে আবারও সশস্ত্র বিক্ষোভ হয়েছে। এই সশস্ত্র বিক্ষোভ গত এক মাসের মধ্যে তৃতীয় আয়োজন। বিক্ষোভকারীরা ডেমোক্র্যাট গভর্ণর গ্রেচেন হুইটমারের জারি করা ঘরে থাকার আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। দেশটিতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নেয়া অঙ্গরাজ্যের একটি মিশিগান।
অস্ট্রেলিয়ায় খুলছে রেস্তরাঁ-ক্যাফে : দুই মাস বন্ধ থাকার পর অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে রেস্তরাঁ, ক্যাফে ও বার খুলছে। শর্তসাপেক্ষে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে। একবারে ১০ জনের বেশি কাস্টমার থাকতে পারবে না। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান গ্লাডিস বেরেজিকলিয়ান শহরবাসীকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল অঙ্গরাজ্য ভিক্টোরিয়াতেও লকডাউন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।