’জাঙ্গাল’ ভালো না থাকায় কৃষকের ভোগান্তি

46

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
’’এমপি সাব আইয়া কয় ধান কাডেন, মন্ত্রী সাব আইয়াও কয় ধান কাডেন, যে আয় হে-ই কয় ধান কাডেন,কিন্তু আাওরের ’জাঙ্গাল’ ভালা না ভালানা, ’জাঙ্গাল’ পাকা করার কথা কেউ কয় না, কেমনে আওর থাইকা ধান আনবো এইডা কেউ ভাবে না’’।
শনির হাওর পার উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক মোকিম হোসেন রবিবার বিকেলে হাওরের ভেতর থেকে গাড়িতে করে ধান পরিবহন করে নিয়ে আসার সময় স্থানীয় ভাষায় কথা গুলো বলেন। তার মতে এ বছর মন্ত্রী, এমপি সাহেব নয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এমন কি ইউপি পি সদস্যগণ কৃষকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শুধু ধান কাটেন আর ধান কাটেন বলে কৃষকদের তাগিদ দিলেন। কিন্তু ধান পরিবহন করে হাওর থেকে কি ভাবে ধান মাড়াই খলা পর্যন্ত নিয়ে আসা যাবে, হাওরের ’জাঙ্গাল’গুলো (আভ্যন্তরীণ সড়ক) ভালো আছে কিনা, সহজে হাওর থেকে মাড়াই খলা পর্যন্ত ধান পরিবহন করে নিয়ে আসা যায় কিনা সে কথা কেহ শুনাইলেন না।
শুধু কৃষক মোকিম হোসেন নয়। হাওর পারের অনেক কৃষক ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা মাড়াই পর্যন্ত ’জাঙ্গাল’ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বছর ভালো হলে বৃষ্টিপাত না হলে কষ্ট কম করেই ধান পরিবহন করে নিয়ে আসা যায় জাঙ্গাল দিয়ে। যদি বৃস্টিপাত হয় ’জাঙ্গাল’ স্থানে-স্থানে ভেঙ্গে যায়, সেই সাথে কর্দমাক্ত হয়ে পরে সমস্ত ’জাঙ্গাল’। তখন হাওর থেকে ধান পরিবহেন দেখা দেয় নানা বিড়ম্বনা। রবিবার বিকেলে শনির হাওর দীঘার ’জাঙ্গালে’ গিয়ে দেখা যায় হাওরের ভেতর থেকে একাধিক ট্রুলি-ট্রাক্টর ধান পরিবহন করছেন। একটি ট্রলিকে পাস দিতে অন্য ট্রলিগুলো ধানের জমিতে নেমে পড়ছে। নামতে গিয়ে একটি ট্রলি উল্টে যেতেও দেখা গেছে। এতে অনেক সময় ট্রলি উল্টে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। উল্টে যাওয়া ট্রলির মালিক ও কৃষক জুলহাস মিয়া এ প্রতিবেদক কে দেখে বলেন, সাংবাদিক বেড দেখো কি কষ্ট কইরা আমরা (কৃষকরা) হাওর থাইক্যা ধান খলা পর্যন্ত নেই।’
জানা যায় উপজেলার শনি, মাটিয়ান, আঙ্গারুলি, মহালিয়া, ফানা হাওর সহ ছোট বড় ২৩টি হাওর রয়েছে উপজেলায়। আর এ ২৩ টি হাওরের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ’জাঙ্গাল’ বা সড়ক পথ রয়েছে শতাধিক কিলোমিটারের মত। তন্মধ্যে ২৩ টি হাওরের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় হাওর শনি, মাটিয়ান। এ দু’হাওরের অভ্যন্তরে ’জাঙ্গাল’ গুলোর দৈর্ঘ্য ক্ষেত্রভেদে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার।
হাওর ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি হাওরের ভিবিন্ন গ্রামের সামনে দিয়ে হাওরে প্রবেশ করার জন্য একটি ছোটখাটো ”জাঙ্গাল’(সড়কপথ) রয়েছে। জাঙ্গালেও শুরুটা একটু চওড়া হলেও যত হাওরের ভেতর প্রবেশ করবেন ততই ছোট হয়ে গেছে তার প্রস্থ। অনেক ক্ষেত্রে একটি ঠেলা গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করাই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। আর বৃষ্টি বাদল হলেতো কথাই নেই। ছোট খাটো পরিবহন ঠেলা, লরি, পিক আপ চলাচল বন্ধ হয়ে পরে। পরিবহন বন্ধ হলে হাওর থেকে দু তিন টানায় ধান মাড়াই খলা পর্যন্ত নিয়ে আসতে হয়। এতে শ্রমিকও বেশী লাগে সেই সাথে টানাটানিতে কিছু ধান পরে ক্ষতি হয় কৃষকের। অনেকে এ সমস্ত বিড়ম্বনা সইতে না পেরে জমি রোপন করাই ছেড়েই দিয়েছেন।
উপজেলার শনির হাওর পার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক হারুনর রশিদ বলেন, প্রতিটি হাওরে যদি দু’একটি সড়কও পাকা করণ করা হতো তাহলে কৃষক ভোগান্তি ছাড়াই সহজে হাওর থেকে ফসল মাড়াই খলাতে নিয় আসেত পারতো। এলাকার কৃষকদেরও এমনাটই দাবী। প্রতিটি হাওরের আভ্যন্তরীণ ’জাঙ্গাল’গুলো পাকা করন হলে তাদের জন্য ভালোই হয়।
তাহিরপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, হাওর গুলোতে ধান পরিবহনের সুবিধার্থে সাবমার্সিবল সড়কের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জি বলেন, প্রতিটি হাওরে যদি সাবমার্সিবল সড়ক নির্মাণ করা যায় তাহলে কৃষকের ভোগান্তি কমবে। এবং তাদের খরচও কিছুটা কমে আসবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাওর থেকে ধান পরিবহনের জন্য সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বৈশাখ মাসে বৃস্টি বাদলের মধ্যে হাওর থেকে ধান পরিবহন করতে কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া চলতি বছর করোনার প্রভাবে খাদ্য সংকট হতে পারে সে থেকে সবাই ধান কাটার জন্য কৃষকদের তাগাদা দিচ্ছিলেন,যেন কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই কৃষক ধান কাটতে পরেন।